ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেলের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ফাইনালে উঠলো রাজশাহী রয়্যালস।টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ২ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে রাজশাহী।
ক্রিস গেইলের ২৪ বলে ৬০ রানের সুবাদে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬৪ রান করে চট্টগ্রাম। জবাবে অধিনায়ক রাসেলের ২২ বলে অনবদ্য ৫৪ রানে ৪ বল বাকি রেখেই জয় তুলে নিয়ে ফাইনালে নাম লেখায় রাজশাহী। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ফাইনালে মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে মুখোমুখো হবে রাজশাহী।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেয় রাজশাহী রয়্যালস। ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি চট্টগ্রামের। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ওপেনার জিয়াউর রহমানকে হারায় চট্টগ্রাম।
৬ রান করে পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ ইরফানের বলে আউট হন তিনি। এরপর ইনফর্ম ইমরুল কায়েস এবার ব্যর্থ হয়েছেন। ৫ রান করে রাজশাহীর অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেলের বলে ফিরেন তিনি।
এক প্রান্ত দিয়ে উইকেট পড়লেও রানের চাকা সচল রেখেছিলেন আরেক ওপেনার গেইল। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আবু জায়েদকে ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। এরপর চতুর্থ ওভারে পাকিস্তানের শোয়েব মালিককে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন গেইল। ফলে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট পড়লেও ৫৮ রান পেয়ে যায় চট্টগ্রাম।
দ্রুত ব্যাটিংয়ে ২১তম বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আগের তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ গেইল। হাফ-সেঞ্চুরির পরও নিজের ইনিংস বড় করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে দশম ওভারে গেইলকে থামান রাজশাহীর আফিফ। ওভারের শুরুটা ছক্কা দিয়েই করেছিলেন গেইল। কিন্তু পরের বলেই আফিফের বলে বোল্ড হন তিনি।
৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় ২৪ বলে ৬০ রান করেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইউনিভার্স বস। তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে ২৫ বলে ৫২ রান যোগ করেন গেইল। দলীয় ৯৭ রানে গেইলের বিদায়ের পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মাহমুদউল্লাহও। ১৮ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩৩ রানে থামেন তিনি। শিকার হন পাকিস্তানের বাঁ-হাতি স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজের।
মাহমুদউল্লাহর আউটের পর দলীয় ১৩৯ রানে পৌঁছাতেই সপ্তম উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। ফলে রান তোলার গতি কমে আসে চট্টগ্রামের। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে ২৫ বলে ৩১ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে চট্টগ্রামকে ৯ উইকেটে ১৬৪ রানের লড়াই করার পুঁজি এনে দেন শ্রীলঙ্কার আসলে গুনারত্নে। রাজশাহীর ইরফান ও নাওয়াজ ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৬৫ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই চাপে পড়ে রাজশাহী। ৩৪ রানের মধ্যে ৩ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরেন। দুই ওপেনার লিটন দাস ৬ রান করে রান আউট হন। আফিফকে ২ রানে বিদায় দেন পেসার রুবেল। আর চার নম্বরে নামা অলক কাপালিকে ব্যক্তিগত ৯ রানে থামান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
শুরুর ধাক্কাটা সামাল দেওয়ার জন্য মারমুখী মেজাজ থেকে সড়ে আসেন উইকেটরক্ষক ইরফান শুক্কুর ও পাকিস্তানের মালিক। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন তারা। দলকে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টায় রানের চাকা সচল করেন শুক্কুর ও মালিক। তৃতীয় উইকেটে ৪৭ বলে ৪৬ রান যোগ করেন তারা। বড় হতে থাকা জুটিতে ভাঙন ধরান জিয়াউর। প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে ৫০ বলে ৮০ রান করা মালিক এবার ১৪ রান করেন।
দলীয় ৮০ রানে মালিকের পতনের পর আউট হন শুক্কুর ও নওয়াজ। এক প্রান্ত আগলে রাখা শুক্কুর ৪৫ রানের বেশি করতে পারেননি। ৪২ বলে ৬টি চারে নিজের ইনিংসটি সাজান শুক্কুর। তাকে শিকার করেন এবারের আসরে চট্টগ্রামের সেরা পেসার মেহেদি হাসান রানা। ৫ বলে ২টি ছক্কা ঝড়ো ১৪ রান করে থামেন নওয়াজ।
নওয়াজের বিদায়ের পরও রাজশাহীর জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন অধিনায়ক রাসেল। শেষ ১২ বলে ৩১ রান দরকার ছিল রাজশাহীর। হাতে ছিল ২ উইকেট। এ অবস্থায় ১৯তম ওভারে ২৩ রান তুলেন রাসেল ও আবু জায়েদ। এর মধ্যে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া রাসেল ২টি ছক্কা ও ১টি চার এবং জায়েদ ১টি চার মারেন। বোলার ছিলেন চট্টগ্রামের রানা।
ফলে শেষ ওভারে রাজশাহীর জয়ের সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ৮ রান। বল হাতে পেয়েছিলেন মিডিয়াম পেসার গুনারত্নে। স্ট্রাইকে ছিলেন রাসেল। প্রথম দুই বলে কোন রান নেননি রাসেল। তৃতীয় বলটি ওয়াইড হয়। আর চতুর্থ ডেলিভারিতে নো-বলে ছক্কা মারেন রাসেল। আর এখানেই অবিস্মরণীয়ভাবে ম্যাচ জিতে নেয় রাজশাহী।
নবম উইকেটে জায়েদের সাথে ১৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৭ রানের জুটি গড়েন রাসেল। এর মধ্যে ১২ বলে ২৯ রান ছিল রাসেলের। শেষ পর্যন্ত ২২ বলে ২টি চার ও ৭টি ছক্কায় অপরাজিত ৫৪ রান করেন রাসেল। ২ বলে ৫ রানে অপরাজিত থাকেন জায়েদ। চট্টগ্রামের রুবেল ও এমরিত ২টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ১৬৪/৯, ২০ ওভার (গেইল ৬০, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, নওয়াজ ২/১৩)
রাজশাহী রয়্যালস : ১৬৫/৮, ১৯.২ ওভার (রাসেল ৫৪*, শুক্কুর ৪৫, রুবেল ২/৩২)।
ফল : রাজশাহী রয়্যালস ২ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : আন্দ্রে রাসেল (রাজশাহী)।