দুই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ও ইংল্যান্ডের ডেভিড মালানের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের টুর্নামেন্টের ৩৫তম ম্যাচে সিলেট থান্ডারকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। এ জয়ে প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো কুমিল্লা। অপরদিকে হার দিয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএল শেষ করলো সিলেট।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেয় কুমিল্লা। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪১ রান করে সিলেট। জবাবে মালানের ৫৮ ও সৌম্যের ৩০ বলে অপরাজিত ৫৩ রানের সুবাদে ৫ বল বাকি রেখেই জয়ের স্বাদ পায় কুমিল্লা।
১০ খেলায় ৫টি করে জয়-হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে থাকলো কুমিল্লা। এতে প্লে-অফে খেলার আশা বেঁচে থাকলো দলটির। তবে ডাবল-লিগ পদ্ধতিতে ১২ ম্যাচে অংশ নিয়ে ১ জয় ও ১১ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সর্বশেষ ও সপ্তম দল হয়ে বিপিএল শেষ করলো সিলেট। তাদের একমাত্র জয়টি ছিল খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে।
ব্যাট হাতে শুরুটা বেশ মন্থর ছিল সিলেটের। ৩২ বলে ২৭ রান যোগ করেন দলের দুই ওপেনার অধিনায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার ও আব্দুল মজিদ। তবে রানের চাকা সচল রাখা ফ্লেচার ৪টি চারে ২৫ বলে ২২ রান করে আউট হন। স্বদেশীর বিদায়ে উইকেটে গিয়ে মারমুখী হন জনসন চার্লস। ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৫ বলে ২৬ রান করেন চার্লস। ফ্লেচারের মত চার্লসকেও শিকার করেন পেসার আল-আমিন হোসেন। দলীয় ৬৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট হারায় সিলেট।
এ অবস্থায় মজিদকে নিয়ে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন চার নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিঠুন। সফল হলেও বড় জুটি গড়তে পারেননি তারা। ৪১ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন মজিদ-মিঠুন। ১৭তম ওভারে মিঠুনকে শিকার করে জুটি ভাঙেন আফগানিস্তানের মুজিব উর রহমান। টেস্ট মেজাজে খেলে ২৫ বলে ১৮ রান করেন মিঠুন।
ইনিংসের শেষ দিকে শ্রীলঙ্কার জীবন মেন্ডিসের ১১ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৩ ও ওপেনার মজিদের ৪০ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৫ রানে সম্মানজনক পুঁজি পায় সিলেট। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে ১৪১ রান করে সিলেট। ওপেনার হিসেবে ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হন মজিদ। কুমিল্লার আল-আমিন ও দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড ওয়াইজ ২টি করে উইকেট নেন।
প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রাখতে ১৪২ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই মহাবিপদে পড়ে কুমিল্লা। ৪ ওভারে মাত্র ১০ রানের মধ্যে দুই ওপেনার শ্রীলঙ্কার উপুল থারাঙ্গা ও ফারদিন হাসান বিদায় নেন। দু’জনকেই বিদায় দেন স্পিনার নাইম হাসান। এরপর মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক মালান।
তবে দু’জনে একত্রে বেশি দূর যেতে পারেননি। এ জুটিতেও ভাঙন ধরান নাইম। ১টি ছক্কায় ৯ বলে ১১ রান করা অঙ্কনকে বিদায় দেন নাইম। তার বিদায়ে দলীয় ৩২ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে কুমিল্লা। তবে চতুর্থ উইকেটে দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন মালান ও সৌম্য।
সিলেটের বোলারদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে দলের ভিত শক্ত করেন তারা। ১৬তম ওভারে শতরানে পৌঁছে যায় কুমিল্লা। এ সময় এবারের আসরে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মালান। হাফ-সেঞ্চুরির পর মালানকে থামান সিলেটের পেসার এবাদত হোসেন। ২টি করে চার-ছক্কায় ৪৯ বলে ৫৩ রান করেন মালান।
আজকের ইনংস শেষে ৪৩৫ রান নিয়ে এবারের আসরে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংগ্রাহকের জায়গাটি অক্ষুণ্ন রাখের মালান। চতুর্থ উইকেটে মালানের সাথে ৪৮ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন সৌম্য। অধিনায়ক ফিরলেও দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন সৌম্য। মারমুখী মেজাজে ৩০তম বলে বাউন্ডারি দিয়ে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করে দলকে জয়ের স্বাদ দেন সৌম্য।
৩০ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩০ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন সৌম্য। সিলেটের নাইম ২১ রানে ৩ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন কুমিল্লার অধিনায়ক মালান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট থান্ডার : ১৪১/৫, ২০ ওভার (মজিদ ৪৫, চার্লস ২৬, আল-আমিন ২/৩০)
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স : ১৪২/৫, ১৯.১ ওভার (মালান ৫৮, সৌম্য ৫৩*, নাইম ৩/২১)।
ফল : কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : ডেভিড মালান (কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স)।