শেষ ওভারের নাটকীয়তায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ২৭তম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৯ রান করে চট্টগ্রাম। জবাবে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬১ রান করে কুমিল্লা।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগান চট্টগ্রামের দুই ওপেনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেন্ডল সিমন্স ও জুনায়েদ সিদ্দিকী। পাওয়া প্লে’তে ওভারপ্রতি ৯ রান নিয়ে স্কোর বোর্ডে ৫৪ রান যোগ করেন তারা। এমনকি দলকে শতরানের স্বাদও দেন এ জুটি। ১১তম ওভারে দলকে তিন অংকে পৌঁছে দেন চট্টগ্রামের দুই ওপেনার।
তবে ১২তম ওভারে এ জুটিকে বিচ্ছিন্ন করেন কুমিল্লার মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার। ২৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেওয়া সিমন্স থামেন ৫৪ রানে। ৩৪ বলের ইনিংসে ৫টি চার ও ২টি ছক্কা হাকান তিনি। দলীয় ১০৩ রানে দলের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সিমন্স। এরপর মিনি ধস নামে চট্টগ্রামের ইনিংসে।
১১৬ রানে পৌঁছাতে আরও ৩ উইকেট হারায় তারা। জুনায়েদ ৬টি চারে ৩৭ বলে ৪৫, ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাঁদউইক ওয়ালটন ৯, জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল ২ রান করে আউট হন। ১৩ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট পতনে চট্টগ্রামের রান তোলার গতি কমে যায়। তবে এ ম্যাচের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নুরুল হাসানকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন প্রথমবারের খেলতে নামা জিয়াউর রহমান। জিয়াউর মারমুখী থাকলেও সর্তক ছিলেন নুরুল। শেষ পর্যন্ত ৪ রানে আউট হন নুরুল।
ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে চট্টগ্রামকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন জিয়াউর। ৪টি ছক্কায় ২১ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করেন তিনি। এতে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৯ রান করে চট্টগ্রাম। কুমিল্লার সৌম্য ২০ রানে ২ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৬১ রানের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ওভারেই চারটি চার মারেন কুমিল্লার ওপেনার দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যান জিল। বোলার ছিলেন আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বাঁ-হাতি পেসার মেহেদী হাসান রানা। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। চারটি বাউন্ডারিতে ১২ বলে ২২ রান করে চট্টগ্রামের ইংল্যান্ডের পেসার লিয়াম প্লাঙ্কেটের শিকার হন।
এরপর দলের অন্যান্যরা বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হলেও এক প্রান্ত আগলে রানের ফুলঝুড়ি ফুটিয়েছেন দলের অধিনায়ক ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান। চট্টগ্রাম পর্বে রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান মালানের ব্যাট আজও কথা বলে। ৩৯ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ফলে জয়ের পথ সহজ হয়ে যায় কুমিল্লার। মালান ঝলকে ১৬ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ১৩৪ রান তুলে ফেলে কুমিল্লা। এ অবস্থায় ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ২৪ বলে ২৬ রান দরকার পড়ে কুমিল্লার।
সহজ জয়ের পথে থাকলেও খেই হারায় কুমিল্লা। ১৭তম ওভারে সাব্বির রহমানকে হারিয়ে ১ রান পায় কুমিল্লা। ১৫ বলে ১৮ রানে থামেন সাব্বির। ১৮তম ওভারে ১ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট তুলে নেন চট্টগ্রামের পেসার রুবেল হোসেন। ফলে শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য ২৪ রানের সমীকরণে পড়ে কুমিল্লা।
১৯তম ওভারে মালানের ১টি চারে ৮ রান পায় দল। এতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৬ রান দরকার পড়ে কুমিল্লার। বোলার ছিলেন প্লাঙ্কেট। প্রথম বলে ১ রান নেন মালান। ফলে স্ট্রাইক পান আবু হায়দার রনি । দ্বিতীয় বলে চার ও তৃতীয় বলে ছক্কা মারেন রনি। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ৩ বলে ৫ রান দরকার পড়ে কুমিল্লার।
চতুর্থ বলে বাই থেকে ১ রান নিয়ে মালানকে স্ট্রাইক দেন রনি । কিন্তু পঞ্চম বলে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন মালান। ফলে শেষ বলে জিততে ৩ রানের লক্ষ্য পায় কুমিল্লা। মালানের আউটে শেষ বল খেলতে উইকেটে যান আফগানিস্তানের মুজিব উর রহমান।প্লাঙ্কেটের শেষ বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মেরে কুমিল্লাকে দুর্দান্ত জয় এনে দেন মুজিব।
এ জয়ে প্লে-অফের আশা বেঁচে রইলো কুমিল্লার। ৮ ম্যাচে ৩ জয় ও ৫ হারে ৬ পয়েন্ট কুমিল্লার। অপরদিকে ৯ ম্যাচে ৬ জয় ও ৩ হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে চট্টগ্রাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ১৫৯/৬, ২০ ওভার (সিমন্স ৫৪, জুনায়েদ ৪৫, জিয়াউর ৩৪*, সৌম্য সরকার ২/২০)
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স : ১৬১/৭, ২০ ওভার (মালান ৭৪, ভ্যান জাইল ২২, রুবেল ২/১৬)।
ফল : কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : ডেভিড মালান (কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স)।