বঙ্গবন্ধু বিপিএলে টানা তিন ম্যাচ জয়ের পর হারের স্বাদ নিতে বাধ্য হলো রাজশাহী রয়্যালস। ওপেনার তামিম ইকবাল ও আসিফ আলির দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর পাকিস্তানের পেসার ওয়াহাব রিয়াজের বোলিং ও অতিরিক্ত উইকেটরক্ষক জাকের আলির রেকর্ড গড়া ম্যাচে রাজশাহীকে ৭৪ রানে হারিয়ে দিয়েছে ঢাকা প্লাটুন।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেয় রাজশাহী। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭৪ রান করে ঢাকা প্লাটুন।
ষষ্ঠ উইকেটে ৪৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৯০ রান যোগ করেন তামিম-আসিফ। অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান তামিম ৫২ বলে ৬৮ ও আসিফ ২৮ বলে ৫৫ রান করেন। ১৭৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে ১০০ রানেই গুটিয়ে যায় রাজশাহী।
উইকেটরক্ষক জাকের ৬টি ক্যাচ ও রিয়াজ ৩.৪ ওভার বোলিং করে ৮ রানে ৫ উইকেট নেন। টি-২০ ফরম্যাটে রিয়াজের এটি ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
তবে এর আগে দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি ঢাকার দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়। তৃতীয় ওভারে দলীয় ২০ রানে আউট হন এনামুল। রাসেলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৯ বলে ১০ রান করেন।
এরপর ক্রিজে আসেন প্রথমবারের মত এবারের আসরে খেলতে নামা লুইস রিসি। ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ১১ বলে ৯ রানে থামেন রিসি। আগের তিন ম্যাচে পিঞ্চ হিটার হিসেবে তিন নম্বরে খেলতে নেমেছিলেন মেহেদী হাসান। প্রথম দু’ম্যাচে ৫৯ ও ৫৬ রান করলেও আগের ম্যাচে খালি হাতে ফিরেন মেহেদী। তাই এ ম্যাচে রিসিকে ওপরে সুযোগ গিয়ে মেহেদীকে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ঢাকার টিম ম্যানেজমেন্ট।
মাঠে নেমে ব্যাট হাতে মারমুখী হয়ে ওঠেন মেহেদী। ২টি ছক্কা ও ১টি চারে দলের রানের গতি বাড়ান। অপরপ্রান্তে মেহেদীকে স্ট্রাইক দিতে ওয়ানডে মেজাজে ছিলেন তামিম। কিন্তু দশম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হয়ে যান মেহেদী। ১১ বলে ২১ রান করেন এ ডান-হাতি ব্যাটসম্যান।
তার বিদায়ে উইকেটে যান তৃতীয়বারের মত এবারের আসরে খেলতে নামা আরিফুল হক। কিন্তু ৭ রানে আরিফুলকে থামান রাজশাহীর মিডিয়াম পেসার ফরহাদ রেজা। রানের গতি বাড়াতে এবার উইকেটে যান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু ফরহাদের প্রথম বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ম্যাশ। এতে ১২ দশমিক ২ ওভারে ৮৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ঢাকা।
এ অবস্থায় ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন পাকিস্তানের আসিফ আলি। প্রথম ৬ বল ৭ রান নেন আসিফ। ১৫তম ওভারে ফরহাদকে ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। এতে ১৬ ওভার শেষে ঢাকার রান দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১১৯। ১৭তম ওভারে ফরহাদকে প্রথম তিন বলে ২টি ছক্কা ও ১টি চার হাঁকান আসিফ। আর শেষ বলে ছক্কা মেরে ওই ওভার থেকে ২৩ রান তুলেন তামিম-আসিফ জুটি। ওই ছক্কাতেই ৪৪ বলে এবারের আসরে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম।
৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫২ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। ৪টি করে চার-ছক্কায় ২৮ বলে অপরাজিত ৫৫ রান করেন আসিফ। রাজশাহীর ফরহাদ ৪৪ রানে ২ উইকেট নেন।
১৭৫ রানের লক্ষ্যে প্রথম ওভারেই বিধ্বংসী রূপ নেন রাজশাহীর ওপেনার আফিফ হোসেন। মাশরাফির করা প্রথম ওভারের প্রথম ডেলিভারি থেকে ৩ রান নিয়ে আফিফকে স্ট্রাইক দেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। পরের তিন বলে আফিফ-৬, ৪, ৪ রান নেন। ফলে প্রথম ওভার থেকেই রাজশাহী ১৮ রান পায়।
পরের দু’ওভারে যথাক্রমে ৯ ও ১২ রান তুলেন আফিফ-লিটন। ফলে ৩ ওভারে ৩৯ রান পেয়ে যায় রাজশাহী। চতুর্থ ওভারে পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজকে আক্রমণে আনেন মাশরাফি। আক্রমণে এসেই প্রথম বলে লিটনকে, তৃতীয় বলে অলক কাপালিকে ও শেষ বলে পাকিস্তানের শোয়েব মালিকসহ তিন উইকেট শিকার করেন রিয়াজ। লিটন ৬ বলে ১০, কাপালি-মালিক শূন্য রান করে ফিরেন।
রিয়াজের এমন ভয়ানক আঘাতের পর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে রাজশাহীর পরের দিকে ব্যাটসম্যানদের। পরের দিকে আর কোন ব্যাটসম্যানই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ঢাকার পেসার রিয়াজের ৮ রানে ৫ উইকেট শিকারের পাশাপাশি দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে উইকেটরক্ষক জাকের আলীর রেকর্ড ৬টি ডিসমিসালে মুখ থুবড়ে পড়ে রাজশাহীর।
১৬ দশমিক ৪ ওভারে ১০০ রানে গুটিয়ে যায় রাজশাহী। আফিফ ২৩ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঢাকা প্লাটুন : ১৭৪/৫, ২০ ওভার (তামিম ৬৮*, আসিফ ৫৫*, ফরহাদ ২/৪৪)
রাজশাহী রয়্যালস : ১০০/১০, ১৬.৪ ওভার (আফিফ ৩১, নাহিদুল ১৪, রিয়াজ ৫/৮)।
ফল : ঢাকা প্লাটুন ৭৪ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : ওয়াহাব রিয়াজ (ঢাকা প্লাটুন)।