পিঞ্চ হিটার হিসেবে তিন নম্বরে নেমে ব্যাট হাতে আবারও ঝড় তুললেন স্পিনার মেহেদী হাসান। তার ২৮ বলে ৫৬ রানের সাথে ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালের ৪৯ বলে অপরাজিত ৬০ রানের সুবাদে জয় দিয়ে চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করলো মাশরাফির ঢাকা প্লাটুন।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ১৯তম ম্যাচে সিলেট থান্ডারকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা প্লাটুন। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৪ রান করে সিলেট থান্ডার। জবাবে ৯ বল বাকি রেখেই জয়ের স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে ঢাকা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সিলেট থান্ডার। ব্যাট হাতে সিলেটকে ভালো শুরু করতে দেননি ঢাকার স্পিনার মেহেদী হাসান। মাশরাফির পরিবর্তে বল হাতে ইনিংস শুরু করেন তিনি। প্রথম বলে ফিরতি ক্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচারকে সাজঘরে ফেরান। আগের ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা ফ্লেচার ফেরেন এবার শূন্য হাতে।
এরপর উইকেটে গিয়ে মারমুখী হন আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান চার্লস। ওপেনার আব্দুল মজিদকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৮ বলে ৫১ রানের জুটি গড়েন তিনি। জুটিতে মাত্র ৮ রান অবদান ছিল মজিদের। তাকে শিকার করেন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি।
মজিদ ফিরলেও হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন চার্লস। হাফ-সেঞ্চুরির পরও নিজের ইনিংস বড় করেছেন চার্লস। আগের ম্যাচে ৯০ রানে থামলে সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন চার্লস। এবারও সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন তিনি। কিন্তু ৭৩ রানে চার্লসকে থামান পাকিস্তানের স্পিনার শাদাব খান। ৪৫ বল খেলে ৩টি চার ও ৮টি ছক্কা মারেন চার্লস।
দশম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৯৩ রানে ফিরেন চার্লস। এরপর উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। আফ্রিদির দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ২ রান করেন তিনি। ফলে ১২ দশমিক ৩ ওভারে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মোসাদ্দেক।
অধিনায়কের বিদায়ের পর ঢাকার বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ মিঠুন ও প্রথমবারের মত খেলতে নামা শেরফেন রাদারফোর্ড। ইনিংসের শেষ ৪৫ বলে ৬৫ রান যোগ করেন মিঠুন-রাদারফোর্ড। ফলে ৪ উইকেটে ১৭৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় সিলেট। ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩১ বলে অপরাজিত ৪৯ রান করেন মিঠুন। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৮ বলে ৩৮ রান করেন রাদারফোর্ড। ঢাকার আফ্রিদি ২৬ রানে ২ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৭৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আজও শুভ সূচনা পায় ঢাকা। সোমবার কুমিল্লা ওয়ারিয়সের্র বিপক্ষে খালি হাতে ফেরা এনামুল হক রানের দেখা পান। সতীর্থ তামিম ইকবালকে নিয়ে ৫৮ রানের জুটি গড়েন তিনি। ৫টি চারে ২৩ বল মোকাবেলা করে ৩২ রান করে মোসাদ্দেকের বলে আউট হন এনামুল।
এদিকে আজও পিঞ্চ হিটার হিসেবে তিন নম্বরে নামেন মেহেদী। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম তিন বলে ৪ রান নেন তিনি। এরপরের দু’বলে ১০ রান তুলেন মেহেদী। বোলার ছিলেন সিলেটের স্পিনার সোহাগ গাজী। এরপর দেখেশুনে খেলে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন মেহেদী। তামিমও ছিলেন সাবলীল। তাই ১০ ওভার শেষে ৮৪ রান পেয়ে যায় ঢাকা।
১৩তম ওভারে মারমুখী রূপ নেন তামিম। রাদারফোর্ডের বলে তিনটি চার মারেন তিনি। পরের ওভারে নাজমুল ইসলামকে ২টি ছক্কা মারেন মেহেদী। আর ঐ ওভারেই ৩৯ বলে এবারের আসরে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। আর ১৫তম ওভারে বাউন্ডারি মেরে ২৩তম বলে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সোমবার কুমিল্লার বিপক্ষে ২২ বলে ৫০ রানে পা দেওয়া মেহেদী।
হাফ-সেঞ্চুরির পর একটি চার মেরে বিদায় নেন মেহেদী। ২৮ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৬ রানের ইনিংস খেলে এবাদত হোসেনের বলে সরাসরি বোল্ড আউট হন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ৫০ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়েন তামিম-মেহেদী। কুমিল্লার বিপক্ষে পিঞ্চ হিটার হিসেবে ২৯ বলে ২টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৫৯ রান করেছিলেন মেহেদী।
দলীয় ১৪৫ রানে মেহেদী আউট হওয়ার সময় জয় থেকে ৩০ রান দূরে দাঁড়িয়ে ঢাকা। বল ছিল ২৬টি। পরবর্তীতে ১৭ বলে দলের প্রয়োজনীয় ৩০ রান তুলে নেন তামিম ও জাকের আলি। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৯ বলে অপরাজিত ৬০ রান করেন তামিম। ১১ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ২২ রান করেন জাকের। সিলেটের মোসাদ্দেক ও এবাদত ১টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট থান্ডার : ১৭৪/৪, ২০ ওভার (চার্লস ৭৩, মিঠুন ৪৯*, আফ্রিদি ২/২৬)
ঢাকা প্লাটুন : ১৭৫/২, ১৮.৩ ওভার (তামিম ৬০*, মেহেদী ৫৬, এবাদত ১/২৪)।
ফল : ঢাকা প্লাটুন ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : মেহেদী হাসান (ঢাকা প্লাটুন)।