বঙ্গবন্ধু বিপিএলের জয়ের দেখা না পাওয়া রংপুর রেঞ্জার্সের জন্য জয় যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের চার ম্যাচে চারটিতেই হারের স্বাদ পেল। সর্বশেষ খুলনা টাইগার্সের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে গেল রংপুর। অন্যদিকে নিজেদের তিন ম্যাচে সবকয়টিতেই জয় তুলে নিল খুলনা।
একদিন বিরতির পর শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব। শুক্রবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেয় খুলনা টাইগার্স।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভালো করতে পারেনি রংপুর রেঞ্জার্স। নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান সংগ্রহ করে রংপুর। জবাবে ৪৫ বল হাতে রেখেই ২ উইকেট হারিয়ে ১৩৮ রান করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় খুলনা টাইগার্স।
এর আগে ২ ম্যাচে শতভাগ সাফল্য পাওয়া খুলনার এটি তৃতীয় অর্থাৎ হ্যাটট্রিক জয়। অন্যদিকে নিজেদের আগের ৩ ম্যাচে কোন জয়ের দেখা পাওয়া রংপুর চতুর্থ হারের স্বাদ পেল।
ব্যাট হাতে নেমে মোহাম্মদ নাঈমকে নিয়ে মারমুখী মেজাজে শুরু করেন আফগানিস্তানের উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ শাহজাদ। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমিরের বলে ২টি চারে ১১ রান (৭ বলে) করে সাজঘরে ফেরেন শাহজাদ।
এরপর মিডল-অর্ডারের দু’ব্যাটসম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যামেরন ডেলপোর্ট ও নাদিফ চৌধুরিকে শিকার করে রংপুরকে চাপে ফেলেন পেসার শফিউল ইসলাম। ৪০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে রংপুর। প্রথমবারের মত খেলতে নামা ডেলপোর্ট ৪ ও নাদিফ শূন্য রানে ফিরেন।
শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও ফজলে মাহমুদ। খুলনার বোলারদের ওপর চড়াও হন নাঈম। ফলে ইনিংস বড় করার পথে আসরের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় পৌঁছে যান নাঈম।তবে এবার ভাগ্য সহায় হয়নি। রান আউটের ফাঁদে পড়ে ৩২ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৯ রানে থামেন নাঈম।
নাঈমের পর উইকেটের সাথে মানিয়ে নেওয়া ফজলের সাথে জুটি বাঁধতে ক্রিজে যান রংপুরের অধিনায়ক আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী। নবীও হার মানেন পাকিস্তানের আমিরের কাছে। ৪ রান করে আউট হন তিনি।
দলীয় ৯৪ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হারিয়ে দলকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দিতে লড়াই করেন ফজলে ও ইংল্যান্ডের লুইস গ্রেগোরি।
মারমুখী ছিলেন ফজলে। ২টি চার-ছক্কায় দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ফজলেকে থামিয়ে খুলনাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন শফিউল। ৩৩ বলে ৪২ রান করে শফিউলের তৃতীয় শিকার হন ফজলে। বেশি দূর যেতে পারেননি গ্রেগোরি। ২টি চারে ২০ বলে ২২ রান করেন তিনি। ফলে ৯ উইকেটে ১৩৭ রানের সংগ্রহ পায় রংপুর। খুলনার শফিউল ২১ রানে ৩টি, শহিদুল ইসলাম-আমির ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৩৮ রানের সহজ লক্ষ্যে প্রথম দু’ওভারেই ২৪ রান পেয়ে যায় খুলনা। এর মধ্যে ১৪ রানই ছিল আফগানিস্তানের রহমানউল্লাহ গুরবাজের। আর ১ রান ছিল আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর। তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে শান্তকে থামান মোস্তাফিজ।
দলীয় ২৪ রানে শান্তর বিদায়ে ক্রিজে গুরবাজের সঙ্গী হন রুশো। ব্যাট হাতে রংপুরের বোলারদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে থাকেন তারা। মারমুখী মেজাজে খেলে স্কোরবোর্ডকে শক্তপোক্ত করে তুলে গুরবাজ-রুশো জুটি। এর মধ্যে নবীর এক ওভারে ১৩, স্পিনার আরাফাত সানির এক ওভারে ১৮ ও পেসার তাসকিনের এক ওভারে ১৯ রানও নেন গুরবাজ-রুশো।
তবে এ ঝড় থামান তরুণ পেসার মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। ২২ বলে ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৭ রান করা গুরবাজ আউট করেন মুগ্ধ। দ্বিতীয় উইকেটে ২৭ বলে ৬১ রান যোগ করেন গুরবাজ-রুশো। দলীয় ৮৫ রানে গুরবাজ ফিরলে অধিনায়ক মুশফিককে নিয়ে খুলনার জয় নিশ্চিত করেন রুশো।
চলমান আসরে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে অপরাজিত থাকেন রুশো। ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩১ বলে অপরাজিত ৬৬ রান করেন এ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। ১৭ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। রৌসু-রুশো৩৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৩ রান যোগ করেন। রংপুরের মোস্তাফিজ-মুকিদুল ১টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রংপুর রেঞ্জার্স : ১৩৭/৯, ২০ ওভার (নাঈম ৪৯, ফজলে ৪২, শফিউল ৩/২১)
খুলনা টাইগার্স : ১৩৮/২, ১২.৩ ওভার (রুশো ৬৬*, গুরবাজ ৩৭, মোস্তাফিজ ১/১৮)।
ফল : খুলনা টাইগার্স ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : শফিউল ইসলাম (খুলনা টাইগার্স)।