বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে অপরাজিত হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন সিলেট থান্ডারের মোহাম্মদ মিঠুন। তবে মিঠুনের অনবদ্য ৮৪ রানকে বিফল করে চট্টগ্রামকে দারুণ এক জয় এনে দিয়েছেন ইমরুল কায়েস ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাঁদউইক ওয়ালটন।
ইমরুলের ৬১ ও ওয়ালটনের অপরাজিত ৪৯ রানের সুবাদে সিলেটকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে চট্টগ্রাম। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬২ রান করে সিলেট থান্ডার। জবাবে ৬ বল বাকি রেখেই জয়ের স্বাদ পায় চট্টগ্রাম।
বুধবার (১১১ ডিসেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ম্যাচে দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার রনি তালুকদারকে হারায় সিলেট থান্ডার। ৫ রান করে পেসার রুবেল হোসেনের শিকার হন রনি। এরপর ৩২ বলে ৪৬ রানের জুটি গড়ে সিলেটকে লড়াইয়ে ফেরান ওয়েস্ট ইন্ডিজের জনসন চার্লস ও তিন নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিথুন। ৭টি চারে ২৩ বলে ৩৫ রান করে থামেন চার্লস।
চার্লসের বিদায়ে সপ্তম ওভার শেষে উইকেটে গিয়ে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি শ্রীলঙ্কার জীবন মেন্ডিস। ৪ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রায়াদ এমরিতের বলে আউট হন মেন্ডিস।
এরপর ক্রিজে মিঠুনের সঙ্গী হন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন মিঠুন ও মোসাদ্দেক। এর মধ্যে বেশি মারমুখী ছিলেন মিঠুন। ১৩তম ওভারে চট্টগ্রামের বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে তিনটি ছক্কা মারেন তিনি। আর ৩০ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিঠুন। টি-২০ ক্যারিয়ারে নবম হাফ-সেঞ্চুরির পেয়ে আরও মারমুখী হয়ে ওঠেন এ ব্যাটসম্যান।
মিঠুন-মোসাদ্দেকের ব্যাটিং দৃঢ়তায় লড়াকু স্কোরের পথ পায় সিলেট। ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে সাজঘরে ফিরেন মোসাদ্দেক। রুবেলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ২৯ রানে থামেন তিনি। ১টি করে চার-ছক্কায় ৩৫ বলে ২৯ রান করেন মোসাদ্দেক।
তবে হাফ-সেঞ্চুরির পরও নিজের ইনিংসটি আরও বড় করে শেষ পর্যন্ত ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন মিঠুন। তার ইনিংসে ৪টি চার ও ৫টি ছক্কা ছিল। চতুর্থ উইকেটে মিঠুন-মোসাদ্দেক ৪৮মিনিটে ৬৪ বলে ৯৬ রান যোগ করেন। চট্টগ্রামের রুবেল ২৭ রানে ২ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৬৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪ ওভারে ২০ রানেই ২ উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। জুনায়েদ সিদ্দিকী ৪ ও নাসির হোসেন খালি হাতে ফেরেন। দু’জনকেই শিকার করেন সিলেটের বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু।
শুরুর ধাক্কাটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার আবিস্কা ফার্নান্দো। প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে চাপ সৃষ্টি করেন ফার্নান্দো। ৩টি করে চার ও ছক্কায় দলের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তিনি। তবে দলীয় ৪২ রানে ফার্নান্দোকে বিদায় দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি পেসার ক্রিসমার স্যান্টোকি। ২৬ বলে ৩৩ রান করে আউট হন ফার্নান্দো।
ফার্নান্দোর রান তোলার গতি ধরে রাখেন চার নম্বরে নামা ইমরুল কায়েস। অপরপ্রান্তে সতর্ক ছিলেন জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল। চার-ছক্কায় দ্রুতই স্কোরবোর্ডকে শক্তপোক্ত করতে থাকেন ইমরুল। তবে নবম ওভারে চতুর্থ উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। ৯ বলে ৩ রান করে সিলেটের মোসাদ্দেকের শিকার হন বার্ল।
বার্ল ফিরে গেলেও আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান চাঁদউইক ওয়ালটনকে নিয়ে চট্টগ্রামের জয়ের পথ তৈরি করতে থাকেন ইমরুল। ২৯ বল হাফ-সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন তিনি। অন্যপ্রান্তে মারমুখী মেজাজে ছিলেন ওয়ালটন। ২টি করে চার-ছক্কায় দলের প্রয়োজন মেটানোর পথ সহজ করে ফেলেন তিনি। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ১৮ বলে ২২ রান দরকার পড়ে চট্টগ্রামের।
১৮তম ওভারে ইমরুলের পতন ঘটে। পেসার এবাদত হোসেনের বলে ব্যক্তিগত ৬১ রানে আউট হন ইমরুল। তার ৩৮ বলের ইনিংসে ২টি চার ও ৫টি ছক্কা তিনি। ওয়ালটনের সাথে পঞ্চম উইকেটে ৫৩ বলে ৮৬ রান যোগ করেন ইমরুল। এ জুটিতে দু’জনের সমান ৪১ রান করে অবদান ছিল।
দলের জয় থেকে ১৩ রান দূর থাকতে ইমরুল বিদায় নিলেও চট্টগ্রামের জিততে কোন সমস্যাই হয়নি। ওয়ালটন ও উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান চট্টগ্রামের জয় নিশ্চিত করেন। ওয়ালটন ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩০ বলে অপরাজিত ৪৯ ও নুরুল ৫ রানে অপরাজিত থাকেন। সিলেটের নাজমুল ২৩ রানে ২ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট থান্ডার : ১৬২/৪, ২০ ওভার (মিঠুন ৮৪*, চার্লস ৩৫, রুবেল ২/২৭)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ১৬৩/৫, ১৯ ওভার (ইমরুল ৬১, ওয়ালটন ৪৯*, নাজমুল ২/২৩)।
ফল : চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : ইমরুল কায়েস (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)।