মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর রাইডার্সকে বিদায় করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ষষ্ঠ আসরের ফাইনালে উঠলো ঢাকা ডায়নামাইটস।
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে বুধবার মাশরাফির রংপুরকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে সাকিবের ঢাকা।আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি আসরের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মুখোমুখি হবে ঢাকা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচে টস জিতে রংপুর রাইডার্সকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ঢাকার ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে উড়ন্ত সূচনা করেন রংপুরের ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল ও নাদিফ চৌধুরী। এবারের আসরে এই প্রথম খেলতে নামলেন ৩টি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ খেলা নাদিফ।
ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স হেলস চলে যাবার পর থেকে ওপেনার নিয়ে বড় ভোগন্তিতে ছিল রংপুর। মেহেদি মারুফ নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারায় নাদিফকে সুযোগ দেয় রংপুর। সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠেন নাদিফ। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংস শুরু করেন নাদিফ। অন্য প্রান্তে সর্তক থাকলেও ২টি ছক্কায় ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন গেইল। কিন্তু ৩ বলের ব্যবধানে দুর্দান্ত শুরুতে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখতে থাকা রংপুরের আশা চুরমার হয়ে যায়।
চতুর্থ ওভারের শেষ বল, পঞ্চম ওভারের প্রথম ও দ্বিতীয় বলে তিনটি উইকেট হারিয়ে বসে রংপুর। ১২ বলে ২৭ রান করা নাদিফকে ঢাকার স্পিনার শুভাগত হোম, ১৩ বলে ১৫ রান করা গেইল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার রিলি রুশোকে শূন্য রানে শিকার করেন রুবেল। ফলে দলীয় ৪২ রানেই ৩ উইকেট হারায় রংপুর। গেইল-নাদিফ ৪ ওভারে ৪২ রান যোগ করেছিলেন।
দুর্দান্ত শুরুর পরও হঠাৎ ৩ বলের ঝড়ে খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া রংপুরকে খেলার ফেরানোর চেষ্টা করেন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ মিথুন ও ইংল্যান্ডের রবি বোপারা। তাদের চেষ্টা সফল হয়। চতুর্থ উইকেটে ৬৪ রানের জুটি গড়েন তারা। এ জন্য তারা ৫৪ বল মোকাবেলা করেন । মিথুন-বোপারায় জমে যাওয়া জুটিতে ভাঙ্গন ধরিয়ে ঢাকাকে দারুন এক ব্রেক-থ্রু এনে দেন বাঁ-হাতি পেসার কাজি অনিক। ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৭ বলে ৩৮ রান করেন ফিরেন মিথুন।
মিথুনের বিদায়ের পর রংপুরের ব্যাটিং লাইন তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে। দলীয় ১০৬ রানে চতুর্থ উইকেট হিসাবে মিথুনের বিদায় নেয়ার পর সেখান থেকে ১২৮ রানে নবম উইকেট হারায় রংপুর। এ সময় ইংল্যান্ডের বেনি হাওয়েল ৩, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা শূন্য, নাহিদুল ইসলাম ৪, ফরহাদ রেজা ২, শফিউল ইসলাম শূন্য রানে ফিরেন। রংপুরের সম্মানজনক স্কোর গড়ার আশাও শেষ হয়ে যায়।
শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ১টি ছক্কা ও ২টি চারে রংপুরকে দেড়শ’রানের কোটা পেরিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখান বোপারা। কিন্তু ঐ ওভারের চতুর্থ বলে বোপারাকে থামিয়ে দেন এ ম্যাচে ঢাকার সফল বোলার রুবেল। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৩ বলে ৪৯ রান করেন বোপারা। ঢাকার রুবেল ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ শিকারে তৃতীয়স্থানে ওঠে আসেন রুবেল।
১৪৩ রানের পুঁজি নিয়ে ঢাকার ইনিংসের শুরুতে রংপুরকে ভালো শুরু এনে দেন অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই ঢাকার শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড় উপুল থারাঙ্গাকে ব্যক্তিগত ৪ রানে বিদায় দেন ম্যাশ। এরপর ৩৭ রানের জুটি গড়ে ঢাকাকে লড়াইয়ে রাখেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার সুনীল নারাইন ও রনি তালুকদার।
৮ বলে ১৪ রান করে নারাইন ফিরে গেলেও এক প্রান্ত আগলে দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন রনি। তবে মিডল-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান অধিনায়ক সাকিব ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক খেলোয়াড় কাইরন পোলার্ড ১৪ রান করে আউট হন। ১১তম ওভারে পোলার্ডকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান মাশরাাফি। আর ঐ ওভারের শেষ বলে রান আউটের ফাঁদে পড়েন রনি। ২৪ বলে ৩৫ রান করেন রনি। এতে ৫ উইকেটে ৯৭ রানে পরিণত হয় ঢাকা। এ অবস্থায় ম্যাচে ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে রংপুর।
কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে ৩৪ বলে ৫০ রানের জুটি গড়ে ঢাকাকে ফাইনালে তুলেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল। ৫০ রানের জুটির মধ্যে ১৯ বলে নিজেই ৪০ রান করেন রাসেল। তার টনের্ডো ইনিংসে কোন বাউন্ডারি না থাকলেও ৫টি ছক্কা ছিল। রংপুরের মাশরাফি ৩২ রানে ২ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রংপুর রাইডার্স : ১৪২/১০, ১৯.৪ ওভার (বোপারা ৪৯, মিথুন ৩৮, রুবেল ৪/২৩)
ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৪৭/৫, ১৬.৪ ওভার (রাসেল ৪০*, রনি ৩৫, মাশরাফি ২/৩২)
ফল : ঢাকা ডায়নামাইটস ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : রুবেল হোসেন (ঢাকা)।