সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালকে বিদায় করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে উঠলো রংপুর রাইডার্স। টুর্নামেন্টের এলিমিনেটর ম্যাচে শামীম হোসেনের দারুণ ব্যাটিং নৈপূণ্যে বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে রংপুর। এ ম্যাচ হেরে বিপিএল থেকে বিদায় নিলো সাকিবের বরিশাল। শামীম ৫১ বলে ৭১ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন।
রোববার (১২ জানুয়ারি) প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে সিলেট স্ট্রাইকার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ম্যাচে হেরে যাওয়া দলের সাথে ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে খেলবে রংপুর। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে টস জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।
বরিশালের হয়ে ইনিংস শুরু করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার। তৃতীয় ওভারে মিরাজের ছক্কা ও ফ্লেচারের চারে ১৩ রান পায় বরিশাল। পরের ওভারে পেসার হাসান মাহমুদের শেষ তিন বলে তিনটি চার মারেন মিরাজ।
মিরাজের বাউন্ডারিতে ষষ্ঠ ওভার শুরু হলেও পঞ্চম ডেলিভারিতে ফ্লেচারকে (১২) আউট করে রংপুরকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার রাকিবুল হাসান। মিরাজ-ফ্লেচার উদ্বোধনী জুটিতে ৪৬ রান করেন।
ফ্লেচারের বিদায়ে ক্রিজে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দ্রুত উইকেটে সেট হয়ে রানের গতি বাড়ান তারা। ১০ ওভারে বরিশাল পায় ৭৬ রান। স্পিনার মাহেদী হাসানের করা ১২তম ওভারে ১৬ রান তুলেন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ। ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে এবারের আসরে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিরাজ।
এ জন্য ৩৫ বল খেলেন তিনি। একই ওভারের চতুর্থ বলে মাহমুদউল্লাহর ওভার বাউন্ডারিতে ১শ স্পর্শ করে বরিশালের রান। ১৪তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমণে এসেই উইকেট তুলে নেন রংপুরের শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড় দাসুন শানাকা।
২১ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৪ রান করা মাহমুদউল্লাহকে ফেরান শানাকা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৬ বলে ৬৯ রান যোগ করেন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ।
১৬তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখান শানাকা। ৪৮ বল খেলে ৬৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস ৯টি চার ও ১টি ছক্কা হাকান মিরাজ।
মিরাজের আউটের পর ১৩ বলে কোন বাউন্ডারি-ওভারবাউন্ডারি না পওয়ায় বরিশালের রানের গতি শ্লথ হয়ে যায়। তবে ১৮তম ওভারে শানাকার তৃতীয় বলে ছয় ও চতুর্থ বলে চার মেরে বরিশালকে ১৪ রান এনে দেন আফগানিস্তানের করিম জানাত। হাসানের করা শেষ ওভারে জানাতের চার ও শ্রীলঙ্কার ভানুকা রাজাপাকসের ছক্কায় ১৫ রান পায় বরিশাল। এতে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৭০ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বরিশাল। রংপুরের শানাকা ২টি ও রাকিবুল ১টি উইকেট নেন।
১৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি রংপুরের। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে রংপুরের ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমকে রানের খাতা খোলার আগেই শিকার করেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
এরপর ক্রিজে আরেক ওপেনার রনি তালুকদারের সঙ্গী হন শামিম হোসেন। প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ১টি চারে ৮ রান তুলে রংপুর। বরিশালের দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের করা চতুর্থ ওভারে ১৭ রান তুলেন রনি ও শামিম। রনি ১টি করে চার-ছক্কা ও শামীম ১টি ছক্কা মারেন। সাকিবের করা পরের ওভারে রনির ১টি করে চার-ছক্কায় ১৫ রান পায় রংপুর।
৬ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৫৫ রান পেয়ে যায় রংপুর। স্পিনার সানজামুল ইসলামের করা সপ্তম ওভারের শেষ বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান রনি। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে পেসার কামরুল ইসলামের বলে আউট হন ২টি করে চার-ছক্কায় ১৭ বলে ২৯ রান করা রনি। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে ৩৯ বলে ৬১ রান যোগ করেন রনি ও শামীম।
দলীয় ৬১ রানে রনির আউটের পর চার নম্বরে নামেন অধিনায়ক সোহান। শামীমকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন সোহান। দলের রান ১শ স্পর্শ হওয়ার আগেই শামীম-নুরুলের জুটি ভাঙেন সাকিব। ১৩ বলে ৩টি চারে ১৮ রান করে আউট হন সোহান।
১২তম ওভারের শেষ বলে এবারের আসরে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করেন শামীম। ব্যক্তিগত অর্ধশতক পেতে ৩৬ বল খেলেন তিনি। পাঁচ নম্বরে নামা রংপুরের ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরানকে ৫ রানে বিদায় করে বরিশালকে খেলায় ফেরার সুযোগ করে দেন পেসার খালেদ আহমেদ।
১৭তম ওভারে শামীমকে ফিরিয়ে লড়াই জমিয়ে তুলেন খালেদ। ৪টি করে চার-ছক্কায় ৫১ বলে ৭১ রান করেন শামীম। শামীম যখন ফিরেন তখন রংপুরের জিততে ২০ বলে ৩১ রান দরকার পড়ে।
১৮তম ওভারে শানাকার ছক্কার পর কামরুলের বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ব্রাভো। ২ রান করেন তিনি। ওই ওভারে ১০ রান পায় রংপুর। শেষ ২ ওভারে ১৯ রান দরকার পড়ে রংপুরের। খালেদের ১৯তম ওভারে মাহেদির ২টি চারে ১১ রান পায় রংপুর। এতে শেষ ওভারে জিততে ৮ রান প্রয়োজন পড়ে রংপুরের। কামরুলের করার শেষ ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে দু’টি চার মেরে রংপুরকে জয়ের স্বাদ দেন মাহেদী।
৯ বলে ৪টি চারে অপরাজিত ১৮ রান করেন মাহেদী। ১টি ছয়ে ১২ বলে অপরাজিত ১৫ রান করেন শানাকা। বরিশালের সাকিব-কামরুল ও খালেদ ২টি করে উইকেট নেন।