ঢাকা ডমিনেটর্সকে হারিয়ে চতুর্থ ও শেষ দল হিসেবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চলমান আসরে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে রংপুর রাইডার্স। আসরের ৩৪তম ও দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে ঢাকাকে ২ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে রংপুর। অন্যদিকে, এই ম্যাচ হেরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে নিয়ে লিগ পর্ব থেকে বিদায় নিলো ঢাকা।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দিনের প্রথম ম্যাচে ফরচুন বরিশালের কাছে ৩৭ রানে হেরে বিদায় নেয় খুলনা টাইগার্স। রংপুরের আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করে সিলেট স্ট্রাইকার্স-ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ৯ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে রংপুর। ১১ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে ঢাকা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। টস হেরে ব্যাট হাতে ইনিংস শুরু করেই বিপদে পড়ে ঢাকা। চতুর্থ ওভারের মধ্যে ১১ রানে ৩ উইকেট হারায় ঢাকা। ইনিংসের চতুর্থ বলেই রান আউট হন ওপেনার মোহাম্মদ মিথুন। ২ বলে ৫ রান করেন তিনি।
এরপর আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারকে ৩ ও অধিনায়ক নাসির হোসেনকে ২ রানে বিদায় করেন রংপুরের আফগানিস্তানের পেসার আজমতুল্লাহ ওমরজাই। শুরুতেই বিপদে পড়া ঢাকাকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স ব্লেক।
চতুর্থ উইকেটে ২৭ বলে ৩৮ রান যোগ করেন তারা। ব্লেককে ১৮ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙেন রংপুরের পেসার হাসান মাহমুদ। এরপর উইকেটে সেট হওয়া মামুনকে ২৩ রানে থামান স্পিনার মাহেদি হাসান।
মুক্তার আলিকে ৭ রানে বিদায় করে ঢাকার উপর চাপ বাড়ান পাকিস্তানের স্পিনার মোহাম্মদ নাওয়াজ। ৭৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ১শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে ঢাকা। তবে সেটি হতে দেননি আরিফুল হক ও শরিফুল ইসলাম। সপ্তম উইকেটে ২৪ বলে ২৮ রান তুলে দলের স্কোর ১শ পার করেন আরিফুল ও শরিফুল।
দলীয় ১০৩ রানে আরিফুলকে আউট করেন পাকিস্তানের হারিস রউফ। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৬ বলে ২৯ রান করেন আরিফুল। ১১ রানে রান আউট হন শরিফুল। ইনিংসের শেষ ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৫ রান তুলে ঢাকাকে সম্মানজনক সংগ্রহ এনে দেন আফগানিস্তানের আমির হামজা। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩০ রান করে ঢাকা। ১১ বলে অপরাজিত ১৫ রান করেন হামজা। রংপুরের ওমারজাই ২২ রানে ২ উইকেট নেন।
১৩১ টার্গেট স্পর্শ করলেই প্লে-অফ নিশ্চিত হবে- এমন খেলতে নেমে দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারায় রংপুর। ঢাকার পেসার শরিফুল ইসলামের বলে খালি হাতে আউট হন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। তৃতীয় ওভারে আবারও হোচট খায় রংপুর। তিন নম্বরে নামা হার্ড-হিটার মাহেদি হাসানকে ৪ রানে শিকার করেন শরিফুল। ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে রংপুর।
এরপর রংপুরকে চাপমুক্ত করতে ঢাকার বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমন করেন চার নম্বরে নামা নুরুল। তার ১১ বলে ২১ রানে পাওয়ার প্লেতে ৪২ রান পায় রংপুর। মুক্তার আলির করা ১০ম ওভারে ১৬ রান তুলেন নুরুল-রনি। এরমধ্যে নুরুল ১টি করে ছয়-চার ও রনি ১টি চার মারেন। ১২তম ওভারে সৌম্যর শেষ তিন বলে ১টি চার ও ২টি ছয় মারেন নুরুল। ছক্কা হাকিয়ে ৩১ বলে এবারের আসরে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নুরুল।
১৩তম ওভারে দলীয় ১০২ রানে রনিকে শিকার করে ঢাকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন নাসির। আউট হওয়ার আগে ৩৯ বলে ৩৪ রান করেন রনি। পরের ওভারের প্রথম বলে নুরুলকে থামিয়ে ঢাকাকে ম্যাচে ফেরার পথ দেখান শরিফুল। ৩৩ বলে ৬১ রান করেন নুরুল। ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান নুরুল। তৃতীয় উইকেটে রনি-নুরুল ৬৫ বলে ৯৩ রান যোগ করেন।
১৫তম ওভারে নাসিরের চতুর্থ বলে ছক্কা মারার পরের ডেলিভারিতে আউট হন টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৫শতম ম্যাচ খেলতে নামা পাকিস্তানের শোয়েব মালিক। ৭ রান করেন তিনি। এই শিকারের মাধ্যমে এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ ১৪ উইকেটের মালিক হন নাসির।
পরের ওভারে নাওয়াজকে ১ রানে থামিয়ে লড়াইয় জমিয়ে তুলেন হামজা। দলীয় ১১১ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় রংপুর। সপ্তম উইকেটে ১৩ রান তুলে রংপুরকে জয়ের কাছে নিয়ে যান ওমারজাই ও শামিম। এমন অবস্থায় শেষ ১২ বলে ৭ রান দরকার পড়ে রংপুরের।
১৯তম ওভারে শেষবারের মত আক্রমনে এসে প্রথম দুই বলেই উইকেট তুলে নেন নাসির। শামিমকে ৮ ও রাকিবুল হাসানকে শূন্য হাতে আউট করেন ঢাকার অধিনায়ক।
ওই ওভার থেকে ২ রান আসে। শেষ ওভারে ৫ রানের প্রয়োজন মিটিয়েছেন হারিস রউফ ও ওমরজাই। রউফ-ওমারজাই ৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। ঢাকার নাসির ৪টি ও শরিফুল ৩টি উইকেট নেন।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস