বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তীরে গিয়ে তরী ডুবলো ফরচুন বরিশালের। চরম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে সাকিবের ফরচুন বরিশালকে হারিয়ে দিলো মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্স। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ২৩তম ম্যাচে বরিশালকে মাত্র ২ রানে হারিয়ে দিয়েছে মাশরাফির সিলেট।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৩ রান করে সিলেট। ৬৬ বলে ৮৯ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। জবাবে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৭১ রান করে ২ রানে ম্যাচ হারে বরিশাল।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বরিশালের পেসার খালেদ আহমেদের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১০ রান তুলেন সিলেটের ওপেনার শান্ত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সিলেটের ৩ উইকেট নেন বরিশালের পাকিস্তানী পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম।
ওভারের প্রথম বলে ওপেনার জাকির হাসানকে শূন্যতে, পঞ্চম বলে ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা তৌহিদ হৃদয়কে ৪ রানে ও শেষ ডেলিভারিতে মুশফিকুর রহিমকে খালি হাতে ফেরান ওয়াসিম। ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া সিলটকে খেলায় ফেরানোর লড়াই করে সফল হন শান্ত ও ইংল্যান্ডের টম মুরস।
পাওয়ার-প্লেতে ৪১ রান পায় দলটি। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ায় রানের চাকা সচল রাখেন শান্ত-মুরস। ১৩তম ওভারে দলে রান নব্বইর ঘরে নিয়ে যান তারা। ইনিংসের ১৪তম ওভারে দ্বিতীয়বারের মতো আক্রমণে এসে শান্ত-মুরস জুটি ভাঙেন সাকিব।
উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড আউট হন মুরস। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩০ বলে ৪০ রান করেন তিনি। শান্তর সাথে চতুর্থ উইকেটে ৭১ বলে ৮১ রান যোগ করেন মুরস। দলীয় ৯৬ রানে মুরস ফেরার পরের ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে এবারের আসরে দ্বিতীয় অর্ধশতকের দেখা পেতে ৪৮ বল খেলেন শান্ত।
হাফ-সেঞ্চুরির পর মারমুখী হয়ে কামরুলের করা ১৮তম ওভারে ৩টি চার মারেন শান্ত। অন্যপ্রান্তে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরাও। শেষ ওভারে পেরেরা আউট হলেও সিলেটকে ৫ উইকেটে ১৭৩ রানের সংগ্রহ এনে দেন শান্ত।
পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৬৮ রান যোগ করেন শান্ত-পেরেরা জুটি। ৪টি চারে ১৬ বলে ২১ রান করেন পেরেরা। ৬৬ বল খেলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৮৯ রান করেন শান্ত। বরিশালের ওয়াসিম ৪ ওভারে ৩৪ রানে ৩ উইকেট নেন।
১৭৪ রানের টার্গেটে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারাতে পারতো বরিশাল। সিলেটের অধিনায়ক মাশরাফির করা ওভারের প্রথম বলে পয়েন্টে আফগানিস্তানের ইব্রাহিম জাদরানের সহজ ক্যাচ ফেলেন জাকির। সতীর্থের জীবন পাওয়ার পর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন আরেক ওপেনার সাইফ হাসান। চার ওভারের মধ্যে মাশরাফিকে ৩টি ও মোহাম্মদ আমিরকে ১টি ছক্কা মারেন সাইফ।
পঞ্চম ওভারে পেসার তানজীম হাসান সাকিবের প্রথম ডেলিভারিতে হৃদয়কে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান সাইফ। তবে একই ওভারের পঞ্চম বলে ঝড় তোলা সাইফকে বিদায় দেন সাকিব। ৪টি ছক্কায় ১৯ বলে ৩১ রান করেন সাইফ। সপ্তম ওভারে আবারও উইকেট শিকারে মাতেন সাকিব। এবার এনামুল হককে ৩ রানে বিদায় দেন তিনি।
৪৬ রানে ২ উইকেট পতনের পর জুটি বাঁধেন জাদরান ও অধিনায়ক সাকিব। সিলেটের পেসার রেজাউর রহমান রাজার করা ১০ম ওভারে ২০ রান তোলেন তারা।। সাকিব ২টি চার ও জাদরান ১টি ছয় মারেন। পরের ৩ ওভারে ২৬ রান নেন জাদরান ও সাকিব।
১৪তম ওভারে তৃতীয়বারের মত আক্রমণে এসে জোড়া উইকেট তুলে নেন রাজা। তৃতীয় বলে জাদরানকে ও শেষ ডেলিভারিতে সাকিবকে বোল্ড করেন রাজা। জাদরান ৩৭ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪২ রান করেন। সাকিবের ১৮ বলে ২৯ রানের ইনিংসে ৩টি চার ও ১টি ছয় ছিল।
এরপর ১২ বলে ৩টি ছক্কায় ২১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আমিরের শিকার হন আফগানিস্তানের করিম জানাত। ১৬তম ওভারে মাশরাফির শেষ বলে ৩টি ছয় মারেন জানাত। ম্যাচ জিততে শেষ ৩ ওভারে ৪১ রান দরকার পড়ে বরিশালের। সাকিবের করা ১৮তম ওভার ১৮ রান নেন ইফতেখার ও মাহমুদউল্লাহ।
১৯তম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে ৯ রান করা মাহমুদউল্লাহকে শিকার করেন আমির। পঞ্চম বলে মিরাজের ছক্কায় ওভার থেকে ৮ রান পায় বরিশাল। এতে শেষ ওভারে জিততে ১৫ রান দরকার পড়ে বরিশালের।
বল হাতে শেষ ওভারের প্রথম বলে ওয়াইড দেন রাজা। পরেরটিতে ইফতেখারকে তুলে নেন রাজা। ১৩ বলে ১টি করে চার-ছয়ে ১৭ রানে থামেন ইফতেখার। পরের বলে রান আউট হন ৭ রান করা মিরাজ। তৃতীয় বলে ১ রান নেন কামরুল। চতুর্থ বল হয় ডট। শেষ ২ বলে ১৩ রান দরকার পড়ে বরিশালের। পঞ্চম বলে ছক্কা মারেন ওয়াসিম।
শেষ বলে ৭ রানের দরকারে বাউন্ডারি মারেন ওয়াসিম। ৮ উইকেটে ১৭১ রান করে বরিশাল। ৪ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন ওয়াসিম। সিলেটের রাজা ৩টি, সাকিব-আমির ২টি করে উইকেট নেন।
টানা পাঁচ ম্যাচ জয়ের পর দ্বিতীয় হার দেখলো বরিশাল। বরিশালের দু’টিই হারই সিলেটের কাছে। আসরের প্রথম দেখাতে সিলেটের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল বরিশাল।
এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ৬ জয় ও ১ হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে টেবিলের শীর্ষে সিলেট। অন্যদিকে সমান সংখ্যক ম্যাচে ৫ জয় ও ২ হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে বরিশাল।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস