বোলিং নৈপুন্যে ঢাকা ডমিনেটর্সকে স্বল্প রানে আটকে রেখেছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। তবে ফর্মে থাকা ব্যাটার তৈহিদ হৃদয়কে ছাড়া জয় পেতে অনেকটা কষ্ট পেতে হলো মাশরাফি-মুশফিকের সিলেটকে। ১২৯ রানের লক্ষ্যে মাত্র ৪ বল বাকি থাকতে জয় তুলে নিয়েছে টেবিলের শীর্ষে থাকা দলটি।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নিজেদের আগের একাদশ থেকে ঢাকার বিপক্ষে দুটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নেমেছিল সিলেট। ব্যাটার তৈহিদ হৃদয় এবং জেরাউর রহমান রাজার পরিবর্তে নাজমুল হাসান অপু এবং পেসার রুবেল হোসেনকে একদশে নামায় তারা।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) টুর্নামেন্টের ১৩তম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৮ রান করে ঢাকা। জবাবে ৪ বল বাকি রেখে জয়ের স্বাদ পায় সিলেট। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিল ঢাকা ডমিনেটর্স।
আসরে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে ম্যাচের প্রথম ওভারেই উইকেট শিকারে মাতেন সিলেটের পেসার রুবেল হোসেন। ওভারের তৃতীয় বলে ঢাকার ওপেনার সৌম্য সরকারকে লেগ বিফোর আউট করেন রুবেল।
এরপর পাওয়ার প্লের সুবিধা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন ঢাকার পাকিস্তানী ওপেনার উসমান গনি ও শ্রীলঙ্কার দিলশান মুনাবিরা। তবে সিলেটের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংএ দ্রুত রান তুলতে পারেননি তারা। জুটিতে ২৯ বলে ৩১ রান যোগ হওয়ার পর বিচ্ছিন্ন হন উসমান ও মুনাবেরা।
পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে মুনাবিরাকে আউট করেন পাকিস্তানের স্পিনার ইমাদ। ২টি চারে ১৭ বলে ১৭ রান করেন মুনাবিরা। পরের ডেলিভারিতে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার রবিন দাসকে বোল্ড করেন ইমাদ। খালি হাতে ফিরেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত রবিন।
ধীরলয়ে খেলতে থাকা উসমানকে ব্যক্তিগত ২৭ রানে বোল্ড করেন এ আসরে প্রথম খেলতে নামা স্পিনার নাজমুল ইসলাম। ২৮ বল খেলে ৪টি চার মারেন উসমান। ১৪তম ওভারে দলীয় ৭৪ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে ২৩ বলে ১৫ রান মোহাম্মদ মিথুনকে ফিরিয়ে দিয়ে ঢাকাকে চাপে ফেলে দেন ইমাদ।
এরপর ব্যাট হাতে মারমুখী হয়ে উঠেন অধিনায়ক নাসির ও আরিফুল হক। সিলেটের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলে ৩০ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েন তারা। ১৯তম ওভারের শেষ বলে আরিফুলকে শিকার করে জুটি ভাঙেন সিলেটের পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। ১টি করে চার-ছয়ে ১৬ বলে ২০ রান করেন আরিফুল। নাসির-আরিফুল জুটিতে ১৪ বলে ২৯ রান যোগ করেন।
ইনিংসের শেষ ওভারে ষষ্ঠ বোলার হিসেবে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে মাত্র ৪ রান দেন সিলেটের দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। শেষ বলে রান আউট হবার আগে ৩১ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৯ রান করেন নাসির। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৮ রানের মামুলী সংগ্রহ পায় ঢাকা।
সিলেটের ইমাদ ৪ ওভারে ২০ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া রুবেল-আমির ও নাজমুল ১টি করে শিকার করেন।
১২৯ রানের লক্ষ্যে দলকে ভালো সূচনা এনে দেন সিলেটের দুই ওপেনার পাকিস্তানের মোহাম্মদ হারিস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। মারমুখী মেজাজে রান তুলতে না পারলেও ৪৯ বল খেলে ৫২ রান যোগ করেন তারা। নবম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে সিলেট শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন নাসির।
ওভারের প্রথম বলে শান্তকে ও শেষ ডেলিভারিতে হারিসকে শিকার করেন নাসির। ২টি চারে ২০ বলে ১২ রান করেন শান্ত। ৩২ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৪ রান করেন হারিস। নবম ওভারের প্রথম বলে তিন নম্বরে নামা জাকির হাসানকে ১ রানে বিদায় করেন স্পিনার আরাফাত সানি। ৭ বল ও ৯ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সিলেট।
সিলেটকে চাপমুক্ত করতে চতুর্থ উইকেটে সাবধানে খেলতে থাকেন দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও ইমাদ। উইকেট ধরে খেলে ৩৮ বলে ৩২ রান যোগ করেন তারা। ১৬তম ওভারে মুশির সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে আরিফুলের সরাসির থ্রোতে রান আউটের ফাঁদে পড়েন ইমাদ। চার-ছয় ছাড়া ২০ বলে মাত্র ১১ রান করেন ইমাদ।
ইমাদ যখন আউট হন তখন ২৬ বলে ৩৬ রান দরকার পড়ে। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে তাসকিনের শিকার হন। ১টি করে চার-ছয়ে ২৫ বলে ২৭ রান করা মুশফিক। এমন অবস্থায় শেষ ২ ওভারে ২০ রান দরকার পড়ে সিলেটের।
পাকিস্তানি পেসার সালমান ইরশাদের করা ১৯তম ওভারে পেরেরার ২টি চার ও আকবরের ১টি ছক্কায় ১৮ রান পায় সিলেট। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে সিলেটের জয় নিশ্চিত করেন পেরেরা। পেরেরা ১১ বলে ২১ ও আকবর ৫ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন। ঢাকার নাসির ২টি উইকেট নেন।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস