অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) হ্যাটট্রিক জয় পেয়েছে ফরচুন বরিশাল। টুর্নামেন্টের ১১তম ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে বরিশাল ১২ রানে হারিয়েছে ১২ রানে হারিয়ে দিয়েছে বরিশাল। ব্যাট হাতে ৪৫ বলে অপরাজিত ৮১ রান করেন সাকিব। এছাড়াও বল হাতে ১১ রানে ১ উইকেট নেন তিনি।
প্রথম ম্যাচ হারের পর এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচ জিতলো বরিশাল। অন্যদিকে, নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচের সবগুলোতেই হারলো কুমিল্লা। ৪ খেলায় ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে উঠলো বরিশাল। ৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্স।
শনিবার (১৪র জানুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
প্রথম ৩ ওভারে দলকে ২৫ রানের সংগ্রহ এনে দেন আগের দিন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে মারমুখী ব্যাট করা বরিশালের দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও মেহেদি হাসান মিরাজ। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে মিরাজকে শিকার করে কুমিল্লাকে প্রথম সাফল্য এনে দেন বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। চট্টগ্রামের বিপক্ষে ১২ বলে ২৪ রান করা মিরাজ করেন ৬ রান।
দলীয় ২৬ রানে মিরাজ আউটের পর পাওয়ার-প্লের সুবিধা ভালোভাবে কাজে লাগান তিন নম্বরে নামা চাতুরাঙ্গা ডি সিলভা। এতে ৬ ওভারে ৫০ রান পেয়ে যায় বরিশাল। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে চাতুরাঙ্গাকে আউট করেন স্পিনার নাইম হাসান। ২টি করে চার-ছক্কায় ১২ বলে ২১ রান করেন ডি সিলভা। এরপর দেখেশুনে খেলতে থাকা বিজয় ২০ বলে ২০ রান করে পাকিস্তানী খুশদিল শাহ শিকার হন।
এরপর আফগানিস্তানের ইব্রাহিম জাদরানের সাথে জুটি গড়েন অধিনায়ক সাকিব। দ্রুত রান তুলে দলের স্কোর ১শ পার করেন সাকিব-জাদরান। ১৫তম ওভারে তানভীরের লেগ বিফোরের শিকার হওয়ার আগে ২০ বলে ২টি চার ও ১টি ছয়ে ২৭ রান করেন জাদরান।
১৬তম ওভারের শেষ বলে আসরের দ্বিতীয় ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন সাকিব। এজন্য ৩১ বল খেলেন তিনি।
হাফ-সেঞ্চুরির পর দলের রানের চাকা একাই ঘুড়িয়েছেন সাকিব। পাকিস্তানের পেসার হাসান আলির করা ১৭তম ওভারে ২টি চারে ১০ রান তুলেন তিনি।
১৮তম ওভারে স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে দু’টি ছক্কা মারেন সাকিব। ঐ ওভার থেকে ১৬ রান আসে।
১৯তম ওভারে বরিশালের দুই উইকেট তুলে নেন তানভীর। মিডল-অর্ডারে পাকিস্তানের ইফতেখার আহমেদ ৫ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খালি হাতে বিদায় নেন।
হাসানের করা শেষ ওভারে সাকিব ও করিম জানাতের ১টি করে বাউন্ডারিতে ১৩ রান পায় বরিশাল। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৭ রান পেয়ে যায় বরিশাল। ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৫ বলে অপরাজিত ৮১ রান করেন সাকিব। ৫ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন করিম। কুমিল্লার সফল বোলার তানভীর ৩৩ রানে ৪ উইকেট নেন।
আসরে প্রথম জয়ের জন্য ১৭৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দারুন সূচনা পায় কুমিল্লা। ৫ ওভারে ৪১ রান তোলেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান। ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে রিজওয়ানকে থামান পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। ২টি ছক্কায় ১১ বলে ১৮ রান করেন গতরাতে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করা রিজওয়ান।
পরের ওভারে রান আউটের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন লিটন। ২৬ বলে ৩২ রান করতে ১টি চার ও ৩টি ছয় মারেন লিটন।
মারমুখী মেজাজে শুরু করে বড় ইনিংস খেলার ইঙ্গিত দেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল। তার আক্রমনাত্মক ব্যাটিংয়ে ১০ ওভার শেষে ৮২ রান পেয়ে যায় কুমিল্লা। ইমরুলের মারমুখী ব্যাটিংয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বরিশাল।
তবে ১১তম ওভারের প্রথম বলে ইমরুলকে শিকার করে বরিশালকে দারুন ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার চাতুরাঙ্গা। ১৫ বলে ২৮ রান করে আউট হন ইমরুল। ইমরুলের ফেরার পর দ্রুত বিদায় ঘটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাঁদউইক ওয়ালটন ও উইকেটরক্ষক জাকের আলির। ১৪তম ওভারের মধ্যে ওয়ালটনকে ১৪ রানে সাকিব ও জাকেরকে শূণ্যতে বিদায় দেন ইফতেখার। এমন অবস্থায় শেষ ৬ ওভারে ৭৪ রান দরকার পড়ে কুমিল্লার।
আস্কিং রান রেট বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত রান তুলতে সময় নেননি খুশদিল ও মোসাদ্দেক। ১৫ থেকে ১৮তম ওভারে ১০এর বেশি রেটে রান তোলেন তারা। শেষ ২ ওভারে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৩১ রান দরকার পড়ে কুমিল্লার। ১৯তম ওভারে মোসাদ্দেককে শিকার করেন করিম। ওভার থেকে ৭ রান পায় কুমিল্লা।
শেষ ওভারে ২৪ রানের প্রয়োজন মেটাতে পারেনি খুশদিল। তার ১টি ছক্কায় ১১ রান পায় দল। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৫ রান করে ম্যাচ হারে কুমিল্লা। ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২৭ বলে খুশদিলের অপরাজিত ৪৩ রান শেষ পর্যন্ত বৃথা যায়। ১৯ বলে ২৭ রান করেন মোসাদ্দেক। ২টি চার ও ১টি ছয় মারেন তিনি। বরিশালের সাকিব-চাতুরাঙা-কামরুল-ইফতেখার ও করিম ১টি করে উইকেট নেন।