বিপিএলের ২৩তম ও দিনের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং কারিশমা দেখালো রংপুরের ছেলে আরিফুল হক। শেষ বেলায় (আট নম্বরে) ব্যাট হাতে নেমে ১৯ বলে অপরাজিত ৪৩ রান করে রাজশাহী বিপক্ষে খুলনার জয় এনে দিলেন তিনি।
আরিফুল হকের এ অসাধরণ ব্যাটিং কারিশমায় বিপিএলের ২৩তম ও দিনের প্রথম ম্যাচে খুলনা ২ উইকেটে হারিয়েছে গত আসরের রানার-আপ রাজশাহীকে। এই জয়ে ৭ খেলায় ৪ জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে থেকে টেবিলের তৃতীয় স্থানে উঠলো খুলনা। অন্যদিকে সমান সংখ্যক ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে থেকে ষষ্ঠস্থানে থাকল রাজশাহী।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারায় রাজশাহী। ওপেনার মোমিনুল হক ৫ ও ইংল্যান্ডের ড্যানিয়েল বেল ডারমন্ড শূন্য রানে আউট হন। এমন অবস্থায় খুলনার বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমণ চালান ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্মিথ। তার মারমুখী ব্যাটিং শুরুর পর আবারো উইকেট হারাতে হয় রাজশাহীকে।
শূন্য রানে সাজ ঘরে ফেরেন চার নম্বরে নামা জাকির হাসানও। শ্রীলঙ্কার সেক্কুজে প্রসন্নর অসাধারন ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় জাকিরকে। দলীয় ২১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন স্মিথ ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর। ৪৩ বল মোকাবেলা করে ৭৬ রান যোগ করেন তারা। তাদের ঝড়ো ইনিংসে ১০ ওভার শেষে রাজশাহীর স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৯৭ রান।
২৯ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করা স্মিথ থেমে যান ৬২ রানে। তার ৩৬ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিল। স্মিথ ফিরলেও রাজশাহীর রানের চাকা সচল ছিল মুশফিকুরের কল্যাণে। এবারের আসরে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৫ রানে আউট হন মুশি। ৩৩ বল মোকাবেলা করে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান মুশফিক। ১৬তম ওভারে মুশফিকুরের বিদায়ের পর নিউজিল্যান্ডের জেমস ফ্রাঙ্কলিনের ২৭ বলে অপরাজিত ২৯ রানের কল্যাণে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৬ রান করে রাজশাহী। খুলনার পক্ষে পাকিস্তানের জুনায়েদ খান ২৭ রানে ৪ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৬৭ রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় খুলনা। ১৩ রানে ২ উইকেট হারানোর ধাক্কাটা পরবর্তীতে সামলে উঠেন দক্ষিণ রিলি রোসৌ ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দলকে ভালো অবস্থায় নেয়ার চেষ্টায় সফলই হন তারা। তৃতীয় উইকেটে ৬৭ রানের জুটি গড়েন রোসৌ ও রিয়াদ।
জুটিতে সবেচেয়ে বেশি রান ছিল রিয়াদের। রোসৌর অবদান ছিল ২০ রান। হাফ-সেঞ্চুরির পর রিয়াদ নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ১০৭ রানে বিদায় নেন রিয়াদ। হোসেন আলীর শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৪৪ বল মোকাবেলায় ৮টি চার এবং একটি ছক্কায় ৫৬ রান করেন তিনি। অধিনায়ক আউট হওয়ার পর আরও ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের নিশ্চিতই করে ফেলেছিল খুলনা। কারণ শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য খুলনার প্রয়োজন পড়ে ৩৬ রান। হাতে ছিল ৩ উইকেট। এই অবস্থায় হয়তো খুলনা নিজেও স্বপ্ন দেখেনি ম্যাচ জয়ের।
তবে জয়ের আত্মবিশ্বাস মনের মধ্যে পুষেছিলেন রংপুরের ছেলে আরিফুল। ১৮তম ওভারে রাজশাহীর হোসেন আলীর ওভার থেকে ১৮ রান তুলে নেন তিনি। পাকিস্তানের মোহাম্মদ সামির পরের ওভার থেকে ৯ রান নিয়ে শেষ ওভারে জয়ের জন্য খুলনার টার্গেট দাঁড় করান ৯ রান।
শেষ ওভারে স্মিথের প্রথম বলে ছক্কা ও দ্বিতীয়টিতে বাউন্ডারি তুলে নিয়ে ৪ বল হাতে রেখেই খুলনাকে দুর্দান্ত এক জয় এনে দেন ২৫ বছর বয়সী আরিফুল। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৯ বলে অপরাজিত ৪৩ রান করেন আরিফুল। আর এমন ব্যটিংয়ের জন্য ম্যাচ সেরাও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। রাজশাহীর সামি ৩ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
রাজশাহী কিংস : ১৬৬/৮, ২০ ওভার (স্মিথ ৬২, মুশফিকুর ৫৫, জুনায়েদ ৪/২৭)।
খুলনা টাইটান্স : ১৬৮/৮, ১৯.২ ওভার (মাহমুদুল্লাহ ৫৬, আরিফুল ৪৩*, সামি ৩/২৯)।
ফল : খুলনা টাইটান্স ২ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : আরিফুল হক (খুলনা টাইটান্স)।