চট্টগ্রামকে হেসে-খেলে হারিয়ে ফাইনালে কুমিল্লা

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
চট্টগ্রামকে হেসে-খেলে হারিয়ে ফাইনালে কুমিল্লা

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আসরের দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে ক্যারিবিয় তারকা সুনীল নারাইনের রেকর্ডে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করছে ইমরুল কায়েসের দল।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আসরের দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ১৯ দশমিক ১ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ১৪৮ রানের সংগ্রহ গড়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৩ বল বাকি রেখেই ৩ উইকেটে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় দুইবারের চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা।এখন ১৮ ফেব্রুয়ারি টুর্নামেন্টের ফাইনালে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে কুমিল্লা।

জিতলেই ফাইনাল -এমন সমীকরণকে মাথায় নিয়ে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়ক আফিফ হোসেন। ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি তুলে নেন জ্যাকস। তৃতীয় বলে বাউন্ডারি আদায় করেন জাকির। আর শেষ বলে বাউন্ডারি দিয়ে আবু হায়দারের ওভার শেষ করেন জাকির। এতে প্রথম ওভারেই ১৩ রান পায় চট্টগ্রাম।

দুর্দান্ত শুরুর পর চতুর্থ ওভারে চট্টগ্রামের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন কুমিল্লার পেসার শহিদুল ইসলাম। অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন জ্যাকস। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯ বলে ১৬ রান করেন জ্যাকস। দলীয় ৩১ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ব্যাটিং ধস নামে চট্টগ্রামের।

কুমিল্লার ইংল্যান্ড স্পিনার মঈন আলির ঘূর্ণিতে ৫০ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। উইকেট শিকারের তালিকায় সাথে ছিলেন কুমিল্লার স্পিনার তানভীর ইসলামও। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাঁদউইক ওয়ালটনকে লেগ বিফোর আউট করেন তানভীর। এডিআরএস নিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি ২ রান করা ওয়ালটন।

এরপর মঈনের শিকার হন চট্টগ্রামের তিন ব্যাটার। জাকির ১৯ বলে ২০, আফিফ ১০ বলে ১০ ও শামিম হোসেন শূণ্য হাতে ফিরেন। ইনিংসের ষষ্ঠ ও নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয়-তৃতীয় বলে জাকির ও শামিমকে শিকার করেন মঈন। তবে মঈনের হ্যাটট্টিকের সুযোগ রুখে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
৮ ওভারের মধ্যে উপরের সারির পাঁচ ব্যাটারের আউটের পর দলের হাল ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও উইকেটরক্ষক আকবর আলি। চাপের মাঝেও রানের গতি বাড়াতে মনোযোগী ছিলেন আকবর।

১৩তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কা আসে মিরাজ ও আকবরের ব্যাট থেকে। বোলার ছিলেন তানভীর। এতে ওই ওভারেই শতরানে পৌঁছায় চট্টগ্রামের দলীয় রান। মিরাজ-আকবরের জমে যাওয়া জুটি ভাঙতে কয়েকবার বোলিং পরিবর্তন করেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল। অবশেষে ১৫তম ওভারে কুমিল্লাকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু এনে দেন আবু হায়দার। ২০ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৩ রান করেন আকবর।

এরপর ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই রান আউটের ফাঁদে পড়েন হাওয়েল। মোস্তাফিজুর রহমানের থ্রোতে রান আউট হন ৫ বলে ৩ রান করা হাওয়েল। হাওয়েল ফিরলেও দ্রুত রান তুলেছেন মিরাজ। ১৯তম ওভারে শহিদুলের করা দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারার পরের ডেলিভারিতে বিদায় নেন মিরাজ। তবে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন মিরাজ।

মিরাজের ফেরার পরের দুই বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার ও ফাইন লেগ দিয়ে দু’টি ছক্কা মারেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। তবে ওভারের শেষ বলে নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি। ২টি ছক্কায় ৯ বলে ১৫ রান করেন মৃত্যুঞ্জয়। শেষ ওভারের প্রথম বলে নাসুম আহমেদকে তুলে নিয়ে চট্টগ্রামকে ১৪৮ রানে গুটিয়ে দেন কুমিল্লার পেসার মোস্তাফিজ। কুমিল্লার শহিদুল ৩৩ রানে ও মঈন ২০ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ১৪৯ রানের টার্গেটে কুমিল্লার হয়ে ইনিংস শুরু করেন লিটন দাস ও নারাইন। ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারায় কুমিল্লা। বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলামের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফিরেন ওপেনার লিটন দাস।

তবে এবারের আসরে প্রথমবারের মতো ওপেনার হিসেবে নেমেই বাজিমাত করেন নারাইন। ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন নারাইন। প্রথম ওভারে ১টি ছক্কা ও ২টি চার মারেন তিনি। মিরাজের করা দ্বিতীয় ওভারে ৩টি ছক্কা ও ১টি চার হাঁকান নারাইন। এতে প্রথম দুই ওভারে বিপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৩ রান পায় কুমিল্লা।

নারাইনের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে চতুর্থ ওভারে নাসুমের বলে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন ইমরুল। আর পরের ওভারে আফিফের প্রথম দুই বলে ১০ রান তুলেন নারাইন। এতে হাফ-সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান নারাইন। মৃত্যুঞ্জয়ের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১০ম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন নারাইন।

মাত্র ১৩ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের মাটিতে ও বিপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরির মালিক বনে যান নারাইন। বিপিএলের ইতিহাসে আগের দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরি ছিল পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদের। ১৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।

হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড করা ওভারের তৃতীয় বলে চার মারার পরের ডেলিভারিতেই মৃতুঞ্জয়কে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন নারাইন। ১৬ বলে ৫টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৫৭ রান করেন নারাইন।

নারাইন যখন ফিরেন তখন কুমিল্লার রান ৭৯। জয় থেকে ৬৫ রান দূরে তারা। তখনও বল বাকি ছিল ৮৪টি। তবে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কুমিল্লার টার্গেটটি সহজ করে দেন নারাইন। নবম ওভারে কুমিল্লা শিবিরে আঘাত হানেন হাওয়েল। ২৪ বলে ২২ রান করে আউট হন মিরাজের হাতে জীবন পাওয়া ইমরুল। তার ইনিংসে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল।

অধিনায়কের বিদায়ের পর দলের ইনিংসকে সামনের দিকে টেনেছেন দুই বিদেশি দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু-প্লেসিস ও মঈন। মৃত্যুঞ্জয়ের করা ১১তম ওভার থেকে ১৭ রান তোলে তারা। এতে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় কুমিল্লা।

শরিফুলের ১৩তম ওভারের চতুর্থ-পঞ্চম বলে দুই ছক্কা মেরে কুমিল্লার জয় নিশ্চিত করেন মঈন। তখনও ম্যাচের ৪৩ বল বাকি ছিল। ডু-প্লেসিস ও মঈন সমান ৩০ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন। ডু-প্লেসিস ২৩ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কা এবং মঈন ১৩ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন।

চট্টগ্রামের শরিফুল-মৃত্যুঞ্জয় ও হাওয়েল ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সুনীল নারাইন।

স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস

[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

‘পারফেক্ট’ হচ্ছেন সাকিব, কমবে ভুল: ফাহিম

‘পারফেক্ট’ হচ্ছেন সাকিব, কমবে ভুল: ফাহিম

বিপিএলের ‘ধারাভাষ্যে’ তামিম ইকবাল

বিপিএলের ‘ধারাভাষ্যে’ তামিম ইকবাল

আমাদের সেরাটা দিতে পারিনি, ভাগ্য খুব সহায় ছিল না: বিজয়

আমাদের সেরাটা দিতে পারিনি, ভাগ্য খুব সহায় ছিল না: বিজয়

আইপিএলে দল পাওয়ার দিনে বিপিএলে ডু প্লেসিসের সেঞ্চুরি

আইপিএলে দল পাওয়ার দিনে বিপিএলে ডু প্লেসিসের সেঞ্চুরি