বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে উত্তেজনাকর ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে পা রাখলো ফরচুন বরিশাল। বিপিএলের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লাকে ১০ রানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সাকিব আল হাসানের দল বরিশাল।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। বিপরীতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৩ রানের সংগ্রহ গড়ে ফরচুন বরিশাল। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৩ রান সংগ্রহ করে কুমিল্লা। ফলে ১০ রানের ব্যবধান জয় পেয়ে যায় বরিশাল।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগান ফরচুন বরিশালের দুই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৫৭ রান তুলেন তারা। তবে পরের ব্যাটাররা ভালাে করতে না পারায় বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি বরিশাল।
স্পিনার নাহিদুল ইসলামের করা প্রথম ওভার থেকেই ১৬ রান তুলেন শাহরিয়ার। একই সাথে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ২০ ম্যাচে ৫শ রান পূর্ণ করেন তিনি। শাহরিয়ারের চার-ছক্কার উৎসব অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন টি-টোয়েন্টির বিধ্বংসী ব্যাটার গেইল। ৩ ওভার শেষে দলের রান যেখানে ২৯, সেখানে গেইলের রান ছিল ৩।
তবে বেশিক্ষণ চুপ থাকতে পারেননি গেইল। বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের চতুর্থ ওভারে চারটি বাউন্ডারি মেরে খোলস থেকে বের হন তিনি। পাওয়ার প্লে শেষে সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে গেইলকে তুলে নিয়ে কুমিল্লাকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার শহিদুল ইসলাম। ১৯ বলে ৪টি চারে ২২ রান করেন গেইল।
দশম ওভারে সুইপ করতে গিয়ে তানভীরের বলে লেগ বিফোর আউট হন শাহরিয়ার। ৩০ বলে ৪৪ রান করেন তিনি। ইনিংসে ২টি চার ও ৪টি ছক্কা মারেন। শাহরিয়ারের আউটে বিপদ ঘনিয়ে আসে বরিশালের। দলীয় ৮৪ রানে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হন শাহরিয়ার। এরপর ১১০ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বরিশাল।
সাকিব আল হাসান ১ রান করে রান আউট হন। তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে ১৩ রানে ও তৌহিদ হৃদয়কে ১ রানে শিকার করেন মঈন। মারমুখী মেজাজে ইনিংস শুরু করা জিয়াউর রহমানকে ১৭ রানের বেশি করতে দেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইন। এরপর ডোয়াইন ব্রাভো ও উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের কারণে বরিশালের রান গোলার গতি হঠাৎ মন্থর হয়ে পড়ে।
কুমিল্লার বোলারদের কাউন্টার অ্যাটাক না করে দেখে-শুনে খেলতে থাকেন তারা। সপ্তম উইকেটে ২৩ বলে ২৭ রানের জুটিতে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন ব্রাভো ও নুরুল। ১৯তম ওভারে ব্রাভো-নুরুলকে বিদায় দেন শহিদুল। ২১ বলে ১টি ছক্কায় ১৭ রান করেন ব্রাভো। আর ১৩ বলে ১টি চারে ১১ রান করেন নুরুল।
মোস্তাফিজের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি আদায় করে নিয়েছিলেন বরিশালের আফগানিস্তানের ক্রিকেটার মুজিব উর রহমান। তবে পরের পাঁচ বলে মাত্র ১ রান দেন ফিজ। ফলে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৩ রানের সংগ্রহ পায় বরিশাল। কুমিল্লার শহিদুল ৩ ওভারে ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া মঈন ৪ ওভারে ২৩ রানে ২টি উইকেট শিকার করেন।
১৪৪ রানের টার্গেট পেয়ে শুরুটা বেশ ভালোই করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সাবধানী শুরুতে পাওয়ার প্লেতে ৩৮ রান তুলেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও মাহমুদুল হাসান জয়। পাওয়ার প্লেতে ২টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল কুমিল্লা। অবশ্য শাহরিয়ারের করা চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে লিটনের সহজ ক্যাচ ফেলেন শাহরিয়ার।
সপ্তম ওভারে ১২ রান তুলে নিয়ে দলের স্কোর ৫০এ নিয়ে যান লিটন ও জয়। ১০ ওভারে ৫৯ রান পায় কুমিল্লা। রানের গতি কম থাকলেও কুমিল্লার উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গতে চিন্তায় ছিলেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব। অবশেষে ১১তম ওভারে পঞ্চম বোলার হিসেবে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই উইকেট তুলে নেন বাঁ-হাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা। ৩০ বলে ২০ রান করেন জয়কে বোল্ড করেন রানা।
উইকেটে এসে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল। তবে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন তিনি। ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে শফিকুলের বলে আউট হওয়ার আগে ৫ রান করেন ইমরুল। আর পঞ্চম বলে উইকেটে সেট লিটনকে শিকার করেন শফিকুল। ৪টি চারে ৩৫ বলে ৩৮ রান করেন লিটন। এক ওভারে ২ উইকেট তুলে নিয়ে বরিশালকে খেলায় ফেরান শফিকুল।
এরপর দলের হাল ধরেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু-প্লেসিস। সাথে সঙ্গী ছিলেন মঈন। ১৩তম ওভারে মুজিবকে ও ১৪তম ওভারে সাকিবকে ছক্কা মারেন মঈন। আর শান্তর করা ১৫তম ওভার থেকে ১৪ রান পায় কুমিল্লা। এতে শেষ ৫ ওভারে ৪৬ রানের সমীকরণ দাঁড় করায় কুমিল্লা।
ছক্কা হাঁকিয়ে ১৬তম ওভার শুরু করেছিলেন মঈন। কিন্তু ব্রাভোর পরের বলেই বোল্ড হন তিনি। ৩টি ছক্কায় ১৫ বলে ২২ রান করেন মঈন। মঈনের আউটের পর ১১ বল বাউন্ডারিহীন ছিল কুমিল্লা। এতে আস্কিং রেট বেড়ে যায় কুমিল্লার। শেষ ১৮ বলে জয়ের সমীকরণ দাঁড়ায় ৩২ রান।
১৮তম ওভারে ১০ রান পায় কুমিল্লা। ১৯তম ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে ডু-প্লেসিসের উইকেট তুলে নেন রানা। এখানেই ম্যাচের লাগাম বরিশালের হাতে চলে যায়। কারণ শেষ ওভারে ১৮ রানের দরকার পড়ে কুমিল্লার।
শেষ ওভারে বল হাতে নিয়ে ৭ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে বরিশালের জয় নিশ্চিত করেন মুজিব। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৩ রান করে হারের লজ্জা পায় কুমিল্লা। বরিশালের মুজিব-শফিকুল ও রানা ২টি করে উইকেট নেন। সাকিব ২৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। ম্যাচ সেরা হন ৩ ওভারে ১৫ রানে ২ উইকেট নেওয়া রানা। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ফরচুন বরিশালের মেহেদি হাসান রানা।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]