ঢাকার প্রথম পর্বে তিন ম্যাচে মাত্র এক জয়ে দুশ্চিন্তার পড়েছিল সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন ফরচুন বরিশাল। তবে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের গিয়ে পাল্টে গেছে ভাগ্য। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা নিজেতেদর তিন ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে বরিশাল। হ্যাটট্রিক জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ওঠে গেছে ফরচুন বরিশাল।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে রানে হারিয়ে দিয়েছে ফরচুন বরিশাল। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ১৯ দশমিক ১ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ১৪৫ রানের স্কোর গড়ে ফরচুন বরিশাল। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৫০ রান করে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রামও পুরো ২০ ওভার খেলতে পারেনি। ইনিংসের ২ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যাওয়ার আগে ১৩৫ রান সংগ্রহ করতে পারে চট্টগ্রাম। ফলে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ১৪ রানের জয় তুলে নেয় বরিশাল।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলে চট্টগ্রাম পেসার শরিফুলের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার। এরপর পাওয়ার প্লের সুবিধা ঠিক-ঠাক নিতে পারেননি আরেক ওপেনার হার্ড-হিটার ক্রিস গেইল। পাওয়ার প্লেতে ১৪ বলে ১৫ রান করেন তিনি।
মুনিমের আউটে প্রথম ওভারেই ক্রিজে আসা নাজমুল হোসেন শান্তরও একই চিত্র ছিল। ২০ বলে ১৭ রান তুলেন তিনি। এতে ৬ ওভারে ৩৪ রান পায় বরিশাল। তবে চট্টগ্রামের ইংলিশম্যান উইল জ্যাকসের সপ্তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা ও তৃতীয় ডেলিভারিতে বাউন্ডারি মারেন গেইল। আর পঞ্চম বলে লং-অনে মেহেদি হাসান মিরাজকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ১৯ বলে ২৫ রান করা ইউনিভার্স বস।
উইকেটে ১১ ওভার পর্যন্ত টিকে থাকলেও টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট করতে পারেননি শান্ত। ১৪ রানে জীবন পেয়ে ২৮ রানে থামেন শান্ত। আফিফের করা ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কার মারার পরের ডেলিভারিতে সমাপ্তি ঘটে শান্তর ইনিংসের। ২৯ বল খেলে ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি।
গেইলের আউটের পর উইকেটে গিয়েই ব্যাট হাতে চড়াও হন সাকিব। ১৫তম ওভারে স্পিনার নাসুম আহমেদকে পরপর তিন বলে ছক্কা মারেন তিনি। পরের ওভারে বেনি হাওয়েলকে ছক্কা মারতে পারলেও ওভারের শেষ বলে বিদায় নিতে হয় তৌহিদ হৃদয়কে।
১৭তম ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২০তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। মাত্র ৩০ বল খেলেছেন তিনি। তবে মৃত্যুঞ্জয়ের ওই ওভারের তৃতীয় বল, অন-সাইডে খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে আফিফকে ক্যাচ দেন সাকিব। ৩১ বলে ৫০ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে সমান ৩টি বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি ছিল।
দলীয় ১৩২ রানে সাকিবের বিদায়ের পর বরিশালের পরের দিকের কোন ব্যাটারকে দু’অংকের কোটা স্পর্শ করতে দেননি চট্টগ্রামের মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যুঞ্জয়ের তোপে ১৯ দশমিক ১ ওভারে ১৪৯ রানে অলআউট হয় বরিশাল। ১৯তম ওভারে তিন উইকেট নেন এবারের আসরের একমাত্র হ্যাটট্টিক ম্যান মৃত্যুঞ্জয়।
চট্টগ্রামের সপ্তম বোলার হিসেবে ইনিংসের ১৭তম ওভারে আক্রমণে এসে ২ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন মৃত্যুঞ্জয়। এছাড়া ২টি উইকেট শিকার করেন শরিফুল।
জয়ের জন্য ১৪৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিক চট্টগ্রাম শুরুতেই উইকেট হারায়। ইনিংসের পঞ্চম বলে সাজঘরে ফিরেন উইল জ্যাকস। ৫ বল খেলা উইল জ্যাকসকে খালি ফেরান মুজির-উর-রহমান। ফলে দলীয় ১ রানে উইকেট হারায় চট্টগ্রাম।
শুরুতেই উইকেট হারালেও দ্বিতীয় জুটিতে ৬৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েন আফিফ হোসেন এবং শামীম হোসেন পাটোয়ারী। ১০ দশমিক ৫ ওভারে আফিফ (৩৯) আউট হলে তাদের জুটি ভাঙে। ফলে দলীয় ৭০ রানের দ্বিতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিক দলটি।
আফিফ ফেরার পর শামীমও আর বেশিদূর যেতে পারেননি। দলীয় ৭৬ রানে ব্যক্তিগত ২৯ রান নিয়ে সাজঘলে ফিরেন তিনি। এরপর চট্টগ্রামের মিডল অর্ডারে আর কেউ বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। চাদউইক ওয়ালটন ফিরেন ব্যক্তিগত ১৬ রানে।
শেষ দিকে নেতৃত্ব হারানো মেহেদ হাসান মিরাজ ব্যাট হাতে কিছুটা ঝলক দেখান। ব্রাভোর করা ইনিংসের ১৮তম ওভারে দুটি বাউন্ডারি সাথে একটি ছক্কা হাকান তিনি। তবে ওভারে শেষ বলে সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন জাতীয় দলের এ ক্রিকেটার। মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে ২৬ রান। এর মৃত্যঞ্জয় এবং শরিফুলের ব্যাট থেকে ৯* এবং ১০ রান করলেও সেটি শুধু হারের ব্যবধান কমাতে পেরেছে। ইনিংসের ২ বল বাকি থাকতেই ১৩৫ রানে গুটিয়ে যায় চট্টগ্রামের ইনিংস।
বরিশালের পক্ষে ৩টি করে উইকেট শিকার করেন মুজিব-উর-রহমান এবং সাকিব আল হাসান। এছাড়া ২টি করে উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান রানা এবং ডোয়েন ব্র্যাভো। বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে অর্ধশত রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।
এ জয়ে এক লাফে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন ফরচুন বরিশাল। নিজেদের খেলা ৬ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট অর্জন করেছে বরিশাল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পয়েন্ট ৪ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]