ফরচুর বরিশালের দেওয়া ১৪২ রানের লক্ষ্যে জয়ের পথেই ছিল খুলনা টাইগার্স। তবে শেষ ১৬ রানে চার উইকেট হারানো এবং মুশফিকের রিভার্স সুইপ খেলে আউট হওয়ায় হারের স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের। খুলনা টাইগার্সকে ১৭ রানে হারিয়ে দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে ফরচুন বরিশাল।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় খুলনা টাইগার্স। ফলে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪১ রানের সংগ্রহ গড়ে ফরচুন বরিশাল।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে মেহেদি হাসান রানার বোলিং দুর্দান্ত বোলিং নৈপুন্যে ইনিংসের এক ওভার বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় খুলনা। অলআউট হওয়ার আগে খুলনার সংগ্রহ ছিল ১২৪ রান। ফলে ১৭ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে বরিশালের ইনিংস শুরু করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। সঙ্গী হিসেবে ছিলেন ইংল্যান্ডের জ্যাক লিন্টট। ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই মারমুখী হন গেইল। কামরুল ইসলামের প্রথম ওভারেই তিনটি বাউন্ডারি আদায় করে ইউনিভার্স বস। তৃতীয় ওভারের প্রথম দুই বলে দু’টি চার মারেন লিন্টট। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৬ বলে ব্যক্তিগত ১১ রানে স্পিনার শরিফুল্লাহর বলে বোল্ড হন লিন্টট।
পিঞ্চ হিটার হিসেবে নেমে সুবিধা করতে পারেননি জিয়াউর রহমান। ১৩ বলে ১০ রান করেন তিনি। তবে পাওয়ার প্লের সুবিধা নেন গেইল। ৬ ওভারে ৪৭ রান পায় বরিশাল। অষ্টম ওভারে থামেন জিয়া। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৮ রান যোগ করেন গেইল-জিয়া। জিয়া আউট হওয়ার পর গেইলকে হাফ-সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেন শ্রীলঙ্কার স্পিনার সেক্কুজে প্রসন্ন। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ৩৪ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রানে আটকে যান গেইল।
গেইলের আউটের পরের ওভারে নুরুলকে হারিয়ে চাপে পড়ে বরিশাল। ১১ বলে ৮ রান করে মাহেদির শিকার হন তিনি। ৮৭ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। হৃদয়কে ২৩ রানে ফেরান ফরহাদ রেজা। আর শান্তর উইকেট উপড়ে ফেলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা। ২১ বলে ২৩ রান করেন হৃদয়।
রান খড়ায় ভুগতে থাকা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে নেমেছিলেন। তবে সাত নম্বরে নেমেও সুবিধা করতে পারেননি সাকিব। ৯ বলে ৭ রান করেন প্রথম তিন ম্যাচে ৩৭ করা এ অলরাউন্ডার। পেরেরার দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ২টি চার মারেন সাকিব।
শেষ দিকে ইরফান শুক্কুর ২, আফগানিস্তানের মুজিব উর রহমান ৭ ও মেহেদি হাসান রানা ১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ফলে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪১ রানের পুঁজি পায় বরিশাল। খুলনার কামরুল ৩০ রানে ও ফরহাদ রেজা ১৮ রানে ২ উইকেট নেন।
খুলনাকে ১৪২ রানের টার্গেট দিয়ে শুরুতেই বল হাতে জ্বলে উঠেন এবারের আসরে বরিশালের হয়ে প্রথম খেলতে নামা আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব-উর-রহমান। ইনিংসের প্রথম ওভারে আক্রমণে এসেই দুই উইকেট তুলে নেন মুজিব। দ্বিতীয় ডেলিভারিতে বাউন্ডারি মেরেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার। তবে পরের ডেলিভারিতে ফ্লেচারকে ৪ রানে থামান তিনি। চতুর্থ বলে সৌম্যকে লেগ বিফোর আউট করেন মুজিব।
প্রথম ওভারে দুই উইকেট হারানোর চাপ সামলাতে গিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করেন রনি তালুকদার ও মাহেদি হাসান। ২৬ বলে কোন বাউন্ডারি মারতে পারেননি তারা। ষষ্ঠ ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৩ রান নেন রনি-মাহেদি। সপ্তম ওভারে সাকিবকে ছক্কা মারার পরই আউট হন মাহেদি। ২৩ বলে ১৭ রান করেন তিনি।
অষ্টম ওভারে রনি ১৪ রানে থামেন। এতে ৪০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে খুলনা। চাপ সামলে উঠতে ইয়াসিরকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। নিজেদের মুখোমুখি হওয়া ২২ বলে কোন বাউন্ডারি পাননি তারা। ১২তম ওভার থেকে রানের গতি বাড়াতে থাকেন মুুশফিক-ইয়াসির। তারপরও ১৪ ওভার শেষে আস্কিং রেট ১০ ছুঁইয়ে ফেলে। এমন অবস্থায় ১৫তম ওভারে বাঁ-হাতি পেসার মেহেদি হাসান রানার বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হন ইয়াসির। ২০ বলে ২৩ রান করেন তিনি।
ইয়াসিরের বিদায়ে উইকেটে এসেই মারমুখী হয়ে উঠেন পেরেরা। ১৬তম ওভারে মুজিবকে ১টি করে চার ও ছক্কা মারেন। পরের ওভারে শফিকুলকে ছক্কা মারার পরের ডেলিভারিতে বিদায় নেন পেরেরা। ৯ বলে ১টি চার ও২টি ছক্কায় ১৯ রান করেন পেরেরা। এরপর প্রসন্নও ২ রানে ফিরেন। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ১৪ বলে ২৮ রান দরকার পড়ে খুলনার।
উইকেটে মুশফিক থাকায় জয়ের আশা ছিল খুলনার। প্রসন্নর বিদায়ের ওভারে ছক্কা মেরে শেষ ২ ওভারে জিততে ২১ রানের সমীকরণ পায় খুলনা। হাতে উইকেট ছিল ৩টি। তবে ১৯তম ওভারে বল হাতে নিয়ে বিধ্বংসী রুপ নেন রানা।
ওভারের দ্বিতীয় বলে ফরহাদ রেজা, পঞ্চম বলে শরিফুল্লাহকে এবং ষষ্ঠ বলে মুশফিককে শিকার আউট করে বরিশালকে দারুণ এক জয় এনে দেন রানা। ১৯ ওভারে ১২৪ রানে অলআউট হয় খুলনা। রিভার্স সুইপ খেলে উইকেট কিপারের হতে ক্যাট দেওয়ার আগে ৩৬ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ৪০ রান করেন মুশফিক।
৩ ওভারে ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন রানা। এছাড়া মুজিব-লিন্টট ২টি করে উইকেট নেন। আর সাকিব ২৪ রানে ১ উইকেট নেন।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]