ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরন পোলার্ডের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পর জহিরুল ইসলামের ধৈর্যশীল ইনিংসে খুলনা টাইটান্সের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে দুর্দান্ত এক জয়ের স্বাদ পেল ঢাকা ডায়নামাইটস। সত্যিই অবিশ্বাস্য, এমন ম্যাচও জয় পাওয়া যায়? ক্রিকেটের হিসেবটাই পাল্টে দিল বিপিএলের ফেঞ্চাইজি ঢাকা ডায়নামাইটস।
পোলার্ডের ২৪ বলে ৫৫ ও জহিরুলের ৩৯ বলে অপরাজিত ৪৫ রানে বিপিএলের পঞ্চম আসরের ১৩তম ম্যাচে খুলনাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা। এ জয়ে ৪ খেলা শেষে ৬ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে টেবিলের শীর্ষে উঠলো ঢাকা। অন্যদিকে সমান সংখ্যক ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে থাকলো খুলনা।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে খুলনা। উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ২২ রান এনে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লিঞ্জার। ১০ রানে থাকা ক্লিঞ্জারকে আউট করে জুটিতে ভাঙ্গন ধরান ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি উইকেটরক্ষক ধীমান ঘোষও। মাত্র ২ রান করে ফিরেন তিনি। তাই দলীয় ২৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় খুলনা। এরপর দলের চাকা সচল করার চেষ্টা করেছিলেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও দক্ষিণ আফ্রিকার রিলি রোসৌ। কিন্তু এই জুটি বেশি দূর যেতে পারেনি। কারণ ২৫ বলে ২৪ রান করা শান্তকে বিদায় করেন ক্যারিবিয়ান সুনিল নারাইন।
শান্তর বিদায়ের পর ১৩তম ওভারে ক্রিজে যাবার সুযোগ পান খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দু’টি বাউন্ডারিতে শুরুটা চমৎকার ছিল রিয়াদের। তবে নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি রিয়াদ। ১০ বলে ১৪ রান করে পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদির প্রথম ও একমাত্র শিকার হন রিয়াদ।
অধিনায়কের বিদায়ের সময় খুলনার স্কোর ছিল ১২ দশমিক ২ ওভারে ৭১ রান। দলের রান তোলার গতি কম দেখেই ঢাকার বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন রোসৌ ও ব্র্যাথওয়েট। তাদের মারমুখী মেজাজে ৩৪ বলে ৫৪ রান পায় খুলনা। এতে লড়াকু স্কোর গড়ার পথ পেয়ে যায় তারা।
রোসৌ ৩০ বলে ৩৪ রানে ফিরলেও ব্যাট হাতে চড়াও ছিলেন ব্র্যাথওয়েট। শেষ পর্যন্ত ২৯ বলে ৪টি চার ও ৬টি ছক্কায় অপরাজিত ৬৪ রান করেন তিনি। তাতে ৫ উইকেটে ১৫৬ রানের পুঁজি পায় খুলনা। ঢাকার পক্ষে আবু হায়দার ৪০ রানে ২টি উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৫৭ রানের টার্গেট ঢাকার ব্যাটিং লাইন-আপের কাছে আহামরি কিছুই ছিল না। কারণ তাদের ব্যাটিং লাইন-আপে রয়েছেন টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টরা। কিন্তু খুলনার বোলারদের পরিকল্পনামাফিক বোলিংয়ে শুরুতেই খাদের কিনারায় পড়ে যায় ঢাকা। ২ ওভারের মধ্যে ২ উইকেট হারানোর পর ৪১ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হারায় সাকিবের নেতৃত্বাধীন দলটি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভিন লুইস ৪, সুনীল নারাইন ৭, পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি ১, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যামেরন ডেলপোর্ট ২ ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ১৭ বলে ২০ রান করে ফিরেন। এমনাবস্থায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে ঢাকা।
তবে এই কোণঠাসাকে আমলে নেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরন পোলার্ড। ১১তম ওভারে খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর শেষ পাঁচ ডেলিভারিতে পাঁচটি ছক্কা হাকিয়ে ঢাকার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনেন তিনি।
এরপর ১৩তম ওভারে ব্র্যাথওয়েটের ছয় ডেলিভারি থেকে ২টি করে চার ও ছক্কায় নিয়ে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পোলার্ড। মাত্র ১৯ বলে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান পোলার্ড। অর্ধশতকের পর নিজের ইনিংসটা আর বাড়াতে পারেননি পোলার্ড। খুলনার পেসার শফিউল ইসলামের বলে ব্যক্তিগত ৫৫ রানে আউট হন তিনি। ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ২৪ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান পোলার্ড।
দলীয় ১১৪ রানে পোলার্ড ফিরে যাবার সময় ঢাকার প্রয়োজন ছিল ৩২ বলে ৪৩ রান। এ কাজটি দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করেন উইকেটরক্ষক জহিরুল ইসলাম ও মোসাদ্দেক হোসেন। সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৪৩ রান যোগ করে ঢাকাকে তৃতীয় জয়ের স্বাদ দেন জহিরুল ও মোসাদ্দেক।
রির্ভাস স্কুপে থার্ড-ম্যান দিয়ে বাউন্ডারি হাকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করা জহিরুল অপরাজিত থাকেন ৪৫ রানে। তার ৩৯ বলের ইনিংসে ৫টি চার ছিলো। অপরপ্রান্তে ১২ বলে অপরাজিত ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। ম্যাচের সেরা হয়েছেন জহিরুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
খুলনা টাইটান্স : ১৫৬/৫, ২০ ওভার (ব্র্যাথয়েট ৬৪*, রোসৌ ৩৪, আবু হায়দার ২/৪০)।
ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৫৭/৬, ১৯.৫ ওভার (পোলার্ড ৫৫, জহিরুল ৪৫*, শফিউল ২/২৪)।
ফল : ঢাকা ডায়নামাইটস ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : জহিরুল ইসলাম (ঢাকা ডায়নামাইটস)।