ব্রহ্মপুত্র নদের সীমানা ঘেষা ময়মনসিংহ শহরের ফুসফুস হিসেবে খ্যাত সার্কিট হাউসের বিশাল খোলা মাঠ। ঐতিহ্যবাহী এই মাঠের চারপাশে ইট-পাথরের বাউন্ডারি নির্মাণে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে খোলা এ মাঠে বাউন্ডারি নির্মাণের সিদ্ধান্তকে ‘হৃদয়হীন’ বলে ব্যাখা করছেন শহরের বিশিষ্টজনরা।
সুন্দর এ মাঠে দেয়াল নির্মাণের সিদ্ধান্তে মন খারাপ করেছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার সানোয়ার হোসেনও। ক্রিকেট জীবনে এ মাঠের অনেক স্মৃতি রয়েছে তার। নিরাপত্তার জন্য দেয়াল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেও বিষয়টি আবারও ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সানোয়ার হোসেন বলেন, আমি ময়মনসিংহের সন্তান, ময়মনসিংহে বেড়ে ওঠা, ক্রিকেট শেখা -সবকিছুই ময়মনসিংহ থেকে। আমাদের ক্রিকেট শেখার পেছনে যে মাঠের অবদান বিশাল -সেটা হলো ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস ময়দান। এই মাঠে বাংলাদেশের অনেক নামীদামি ক্রিকেটার খেলেছেন এবং তারা এই মাঠ সম্পর্কে জানেন।
তিনি বলেন, এই মাঠটা সম্পর্কে আমি একটু বলতে চাই। এই মাঠটা এমন একটা মাঠ, মাঠটাতে অনায়াসে তিনটা ক্রিকেট ম্যাচ একসাথে চালানো সম্ভব। এবং এটার ন্যাচেরাল বিউটি ডিফারেন্ট। চারদিকে প্রচুর গাছপালা এবং পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এত সুন্দর এবং এত বিশাল একটা মাঠ আমার মনে হয় না বাংলাদেশের আর কোথাও পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের অনেক জায়গার আমার খেলার সৌভাগ্য হয়েছে কিন্তু এত বিউটি এবং এত বড় একটি মাঠ মনে হয় না কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, এই প্রসঙ্গে আমার কথা বলার কারণ হলো, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা শুনতে পাচ্ছি ময়মনসিংহ শহরের এই মাঠটিকে অবরুদ্ধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা বা বিভাগীয় কর্মকর্তারা সবাই মিলে যে পরিকল্পনা করেছে সেটাকে আমি কোনমতে নেগেটিভভাবে চিন্তা করছি না। মাঠটির সেফটি বা সিকিউরিটির কথা চিন্তা করেই তারা এ পরিকল্পনা করেছেন। সেফটি হিসেবে বলা হচ্ছে, গরু-ছাগল বা গাড়ি অনায়াসে মাঠে ঢুকে যায়, যেটা মাঠের ক্ষতি করে এবং সেফটি সিকিউরিটি নষ্ট হয়।
তিনি বলেন, অবশ্যই এটি পজিটিভ চিন্তা। তবে এই চিন্তাটা, এত সুন্দর একটি মাঠকে অবরুদ্ধ করা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত না। এটা আমরা বিকল্পভাবে চিন্তা করতে পারি। যেটা হলো- মাঠে গাড়ি ঢোকার রাস্তা ২-৩টা, ওই রাস্তাগুলো আমরা বন্ধ করে দিতে পারি। গরু-ছাগল যাতে না ঢুকতে পারে -এর জন্য আমরা সিকিউরিটির ব্যবস্থা করতে পারি। মাঠের উন্নয়ন করা খুব বেশি জরুরি, এটা করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, প্রাক্তণ ক্রিকেটার, অফিসিয়াল, কর্মকর্তা সবাই এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। এই ইস্যু পেক্ষিতে আমি সবার একটা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। একটা সময় ময়মনসিংহ ক্রিকেটে বিশাল ঐতিহ্য ছিল। ময়মনসিংহ থেকে অনেক ক্রিকেটার ঢাকায় প্রতিনিধিত্ব করেছে, জাতীয় দলে খেলেছে। ময়মনসিংহে ক্রিকেট কালচার কিন্তু একটা বিশাল সমৃদ্ধ। ডে বাই ডে কিন্তু ওইটা হারিয়ে যাচ্ছে। আমি যতটা জানি, গত চার-পাঁচ বছর আমরা ময়মনসিংহ লিগ কখনো শেষ করতে পারি না, ক্রিকেট লিগ শুরু হয় শেষ না। কিন্তু আমরা যখন খেলেছি তখন প্রথম শ্রেণির, দ্বিতীয় শ্রেণিসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্ট হতো। যার মধ্য দিয়ে প্রচুর ক্রিকেটার ওঠে আসতো।
ময়মনসিংহের এ সন্তান বলেন, আমার মনে ওই জায়গায় নজর দেওয়া খুব জরুরি সময় এটা। আমরা যদি ওই জায়গায় নজর দেই, মাঠগুলো যদি খেলা উপযোগী করে তুলি, ডেফেনেটলি সবসময় যদি খেলার ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে মাঠে গরু ঢোকার সুযোগ পাবে না, গাড়ি ঢোকার সুযোগ পাবে না। খেলাধুলা নিয়ে মাঠ ব্যস্ত থাকবে। এটা আমাদের চিন্তা করার সবচেয়ে ভালো সময়।
তিনি বলেন, আর একইভাবে আমি এটাও বলতে চাই, আমরা যদি আগের মতো খেলাধুলা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি ডেফেনেটলি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-মোসাদ্দেক সৈকতের মতো টেলেন্টেট ক্রিকেটার আমরা ময়মনসিংহ থেকে প্রডিউস করতে পারবো। ময়মনসিংহ ক্রিকেটেও উন্নয়ন হবে, বাংলাদেশ ক্রিকেটও সমৃদ্ধ হবে। আমরা চাই, সবাই একসাথে বসে একটা সুন্দর সমাধান। সুন্দর এমন একটা মাঠকে যেন আমরা কোনমতেই অবরুদ্ধ না করি, সুন্দর মতো আমরা এর একটা সমাধান চাই।
এদিকে ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী সার্কিট হাউস মাঠে দেয়াল নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষও। ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে মাঠে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবেশ প্রেমীরাও। এছাড়া এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলার ক্রীড়াবিদ, সংগঠক ও খেলোয়াড়রা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
[sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]