কক্সবাজারের সকল খেলার মাঠ পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ

বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলার প্রত্যেক উপজেলায় সংকুচিত, দখলকৃত মাঠগুলো পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি কক্সবাজার শাখা কর্তৃক আয়োজিত খেলার মাঠ সংরক্ষণ ও ক্রীড়া উন্নয়ন বিষয়ক এক সেমিনারে জেলা প্রশাসক মো. হোসেন এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

সেমিনারে জানানো হয়, জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদুর রহমান মোল্লাকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি এক মাসের মধ্যে জেলা সবখেলার মাঠের বর্তমান চিত্র তুলে ধরবে এবং করণীয় সম্পর্কে প্রতিবেদন দেবে। ওই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে সংরক্ষণসহ করণীয় সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রতিটি শিশু-কিশোরকে সুন্দর এবং নির্মল শৈশব দিতে হবে। তার জন্য প্রধান মাধ্যম খেলাধুলা। তবেই আগামীতে সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন জাতি পাব। শিশুদের খেলাধুলা নিশ্চিত করা জন্য খেলার মাঠ দিতে হবে। আর এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন জেলা প্রশাসন সব করবে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ক্রীড়া লেখক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান। শুরুতে জেলা সদর ও উপজেলারগুলো খেলার মাঠের বর্তমান সমস্যা নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্রীড়া লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ শফি।

তিনি জানান, কক্সবাজারে ঐতিহ্যবাহী জেলেপার্ক মাঠ দখল হয়ে গেছে। বিমানবন্দরের জন্য এটি নিয়ে নেওয়া হয়েছে। অথচ মাঠটি ছিলো শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সবচেয়ে বড় ঠিকানা।

এদিকে উন্নয়নের স্বার্থে মাঠটি বিমান বাহিনী নিলেও বিকল্প আরেকটি নির্মাণ করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

আরেক ঐতিহ্যবাহী এবং গুরুত্বপূর্ণ খেলার মাঠ বাহারছড়া গোলচত্বর মাঠও দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নের নামে খেলাধুলা বন্ধ থাকার কথা জানানো হয়। তবে মাঠটি ‘মুক্তিযোদ্ধা স্টেডিয়াম’ নামকরণ করে নতুনভাবে উন্মেচন হবে। সেখানে খেলাধুলা হবে প্রধান। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনার সব ধরণের আয়োজন করা হবে।

সিসি ঢালাই দিয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাঁও মাঠটি খেলার অনুপযোগী করার বিষয়টি সেমিনারে বেশ গুরুত্বসহকারে আলোচনাহয়। উপস্থিত সবাই এ মাঠের অর্ধেক অংশে সিসি ঢালাই দেওয়াকে নেতিবাচক বলে উল্লেখ করেন। তবে অবশিষ্ট মাঠটি ঘাস রোপন করে খেলাধুলার জন্য উপযোগী করে সংরক্ষণ করা হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রুমালিয়ারছড়া পিটি স্কুল মাঠের প্রসঙ্গ উঠলে মাঠটির অর্ধেক দখল করায় উপস্থিত সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ, ওই মাঠ ছিল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষণীয় কর্মসূচি আয়োজন ও খেলাধুলার ঠিকানা। তবে ‘প্রাইমারি লিডারচিফ টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার’ নির্মাণের কারণে মাঠের বেশ কিছু দখল হয়ে গেছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রতিনিধি। পরে অবশিষ্ট মাঠ সংরক্ষনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়।

এছাড়া শহরের গণপূর্তের দুটি মাঠ আবদ্ধ করে রাখা এবং ডুলাহাজারা তিনটি খেলার মাঠসহ সব উপজেলাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণসহ নানাভাবে খেলা মাঠ দখল ও সংকুচিত করা হচ্ছে বলে ক্রীড়া লেখক সমিতির লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরা হয়। একই সাথে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেও অনেক খেলার মাঠ পরিত্যক্ত রয়েছে বলেও জানানো হয়।

অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে গিয়ে উখিয়ার অধিকাংশ খেলার মাঠ বিভিন্ন সংস্থার ক্যাম্প নির্মাণসহ নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী রেখে খেলাধুলা বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। অনেক খেলার মাঠ রোহিঙ্গারাও দখল করে নিয়েছে। সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা উন্নয়নের নামে আর যেন কোন খেলার মাঠ দখল না হয় সে দাবি জানান।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুদুর রহমান মোল্লা, অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আদিবুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি জসিম উদ্দীন, অনুপ বড়ুয়া অপু, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দীন, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী, ক্রীড়া লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি এম আর মাহবুব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তারেকুর রহমান/কক্সবাজার