দেশের প্রথম ১৫০ জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করলো ওমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি। শনিবার (২৬ অক্টোবর) জমকালো এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ একাডেমির উদ্ধোধন করা হয়।
উদ্ধোধনী অনু্ষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদ। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক ও সাংবাদিক মেরিনা লাভলী ও রংপুর জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক চায়না চৌধুরী। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম।
ওমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আরিফা জাহান বীথি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য বিনামূল্যে নারী ও কন্যা শিশুদের জন্য ক্রিকেট খেলার উন্নত প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের ব্যবস্থা করা। একইভাবে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী মেয়েদের ক্রিকেট খেলার প্রশিক্ষণ প্রদান করা এবং সমাজের মূল স্রোতধারায় মিশতে তাদের সাহায্য করা।’
বাংলাদেশে এই প্রথম কোন একাডেমি বিনামূল্যে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার উন্নত প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে এবং বীথিই প্রথম যার হাত ধরে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী মেয়েরাও ক্রিকেট খেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পাবেন।
বীথি নিজেও একজন ক্রিকেটার ছিলেন। ফলে তিনি জানেন একজন মেয়েকে ক্রিকেটার হতে হলে কত ঝড়ের সম্মুখীন হতে হয়। ভবিষ্যৎ সালমা-জাহানারা তৈরি করতে সমাজে একজন বীথির খুব বেশি প্রয়োজন। বীথি তা বিশ্বাস করেন। তিনি আশা করেন, ওমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি থেকে ভবিষ্যৎতে সালমা-রোমানারা বেরিয়ে আসবেন।
জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলার স্বপ্ন ছিল রংপুরের মেয়ে আরিফা জাহান বীথির। তবে সেটা আর হয়নি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলেছেন তিনি। ছিলেন ওরিয়ন স্পোর্টিং ক্লাব, কলাবাগান, রায়েরবাজার দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। তবে ক্যারিয়ার বেশি দূর লম্বা করতে পারেননি। ইনজুরির কারণে ২০১৭ সালে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন রংপুর জেলার নূরপুরের আরিফা জাহান বীথি।
ইনজুরি ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে জাতীয় দলে আর খেলার হয়নি বিথির। এখন তার স্বপ্ন নারী ক্রিকেটকে ঘিরে। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন সত্যি না হলেও রংপুরের মেয়েদের ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এ জন্য গড়ে তুলেছেন ‘ওমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি’ রংপুর। গত ১ অক্টোবর থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
একাডেমি প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বীথি বলেন, সামান্য অর্থ বা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে শত শত সম্ভাবনাময় নারী আজ তাদের জীবনের নানান স্বপ্নপূরণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। একাডেমি মূল লক্ষ্য হলো- সামান্য অর্থ, পৃষ্ঠপোষকতা বা সহযোগিতার অভাবে যাতে আগামীর সালমা, জাহানারা কিংবা সানজিদা, রুমানাদের হারিয়ে না ফেলি, সেই উদ্দেশে একাডেমি করার উদ্যোগ নিয়েছি। একই সঙ্গে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্যও ক্রিকেট খেলার প্রশিক্ষণ প্রদান করা এবং সমাজের মূল স্রোতধারায় মিশতে তাদের সহযোগিতা করা।
বীথি আরও বলেন, নিয়মিত বিনামূল্যে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও অনিয়মিতদের জন্য সাপ্তাহিক বা মাসিক বুস্টআপ ক্যাম্পের আয়োজন করা। দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে উন্নত প্রশিক্ষণ এবং যথাযথ অনুশীলন প্রদান করে আন্তর্জাতিক মানের নারী ক্রিকেটার তৈরি করাও উদ্দেশ্য।
বিথি জানান, একাডেমির জন্য রংপুর স্টেডিয়াম ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছেন। এছাড়া পরিচিত নানাজনের কাছ থেকে একাডেমির জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন। নারীদের খেলাধুলায় আরও উৎসাহিত করতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বীথি।