মাসুরা পারভীন, জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়। গত বছর মাসুরা পারভীনের একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ মেয়েদের সাফের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। অথচ মাসুরা পারভীনের পরিবার ভূমিহীন! এক চিলতে জমি নেই তার পিতার।
২০১৬ সালে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর আশ্বাস দিয়েছিলেন মাসুরা পারভীনের পরিবারকে। তবে এখনো মাথা গোজার ঠাঁই হয়নি জাতীয় ফুটবল দলের খোলোয়াড় মাসুরা পারভীনের পরিবারের।
মাসুরা কেবল ফুটবল নয়, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অবাক করে দিতে পারেন তিনি। সাতক্ষীরার এই মেয়ে ফুটবলের পাশাপাশি হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি ও অ্যাথলেটিকসে জাতীয় প্রতিনিধিত্ব করেছে। ২০১৩ সালের বাংলাদেশ গেমসে মাসুরা উল্লেখিত প্রতিটি খেলাতেই অংশগ্রহণ করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় একটি জরাজীর্ণ ভাঙাচোরা দোচালা ঘর ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকেন মাসুরার বাবা ভ্যানচালক রজব আলী। প্রায় অসুস্থ থাকেন তার বাবা। শহরের বাঙালের মোড়ে একটি ভ্যানে করে তরমুজ বিক্রি করে নিজের ওষুধের টাকা রোজগার করছেন।
অনূর্ধ্ব-১৮ মেয়েদের সাফ শিরোপা জয়ের পর অন্যান্যদের সাথে মাসুরা পারভীন (ডানে)
মাসুরা পারভীনের বাবা রজব আলী জানান, তার তিন কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ভাঙা ঘরে থাকেন। ছোট দুই ঘরে তিন মেয়ে ও তাদের দু'জনের থাকতে কষ্ট হয়। তিন কন্যার মধ্যে বড় মেয়ে মাসুরা পারভীন জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়।
মেঝো মেয়ে সুরাইয়া পারভীন অষ্টম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে সুমাইয়া খাতুন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। ঘরভাড়া, সংসার খরচ ও মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দেয় বড় মেয়ে মাসুরা।
বাবা-মা ও দুই বোনের সাথে মাসুরা পারভীন (মাঝে), তরমুজ বিক্রি করছেন অসুস্থ বাবা
রজব আলী আরও জানান, তার নিজের কোন জমি নেই। বিষয়টি জানার পর ২০১৬ সালে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে তাকে ডেকে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক শহরতলীর খেজুরডাঙি এলাকায় সরকারি খাসজমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আইনের জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে আজও কোন ঠিকানা হয়নি তাদের।
মাসুরা পারভীনের মা ফাতেমা খাতুন বলেন, সাতক্ষীরা শহরে বাসযোগ্য যেকোন স্থানে যদি এক টুকরো খাসজমি পেতেন সেখানেই ঘর বেঁধে মেয়েদের নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারতেন।
বিভিন্ন খেলায় পাওয়া মেডেল ও ক্রেস্ট দেখান মাসুরা পারভীনের মা
মাসুরার বোন সুরাইয়া পারভীনও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। অনেক খেলোয়াড়ারের ঘর দিয়েছেন এবং মাথা গোজার জায়গা করে দিয়েছেন। আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তিনি যেন আমাদের পরিবারের প্রতি একটু নজর দেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন কালু বলেন, মাসুরা পারভীন জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়। সে দেশের সম্পদ। দেশের হয়ে খেলে সারা বিশ্বে সুনাম কুঁড়িয়েছে। দেশের হয়ে অনেক পুরস্কার জিতেছে। অথচ মাসুরা পারভীনের পরিবার ভূমিহীন। এক চিলতে জমি নেই তার পিতার।
সাফ শিরোপা জয়ের পর অন্যান্যদের সাথে মাসুরা পারভীন (বাম থেকে তৃতীয়)
সাতক্ষীরা পৌরসভার পক্ষ থেকে মাসুরা পারভীনের পরিবার যাতে মাথা গোজার ঠাঁই পায় তিনি সে ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনার পাশাপাশি সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, গত বছর মাসুরা পারভীনের একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ মেয়েদের সাফের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। জাতীয় ফুটবল দলের পাশাপাশি কাবাডি জাতীয় দলেও খেলেছে নেপালের বিপক্ষে একমাত্র গোল করা মাসুরা। এছাড়া বাংলাদেশ গেমসে কয়েকটি খেলায় অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা আছে তার।
আসাদ সরদার, সাতক্ষীরা