দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের গোল্ডেন মেয়েরা। সারা দেশের ন্যায় অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরাতেও বইছে আনন্দের জোয়ার। তবে সবাই আনন্দের জোয়ারে ভাসলেও দুশ্চিন্তায় রয়েছে মাসুরার পরিবার।
সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বেতনা নদীর তীরে বিনেরপোতা এলাকায় মাসুরাদের বাড়ি। সেই বাড়িতেই মাসুরার মা-বাবা ও দুই বোন বসবাস করেন। মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাদের বাড়ি গিয়ে মাসুরার বাবা রজব আলী ও মা ফাতেমা বেগমের সঙ্গে কথা হয় স্পোর্টসমেইল২৪.কম এর প্রতিবেদকের সাথে।
ফুটবলার মেয়ের এমন অর্জনে নিয়ে মাসুরার বাবা-মার সাথে কথা বলার সময় প্রতিবেদকের চোখে পড়ে, ঘরের পেছনের দেয়ালে লাল রঙের ক্রস চিহ্ন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলে জানা যায়, মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরলেও দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার পরিবার। বাড়িটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরকারি জায়গায় হওয়ায় ভেঙে দেওয়া হবে।
মাসুরার বাবা রজব আলী স্পোর্টসমেইল২৪.কম-কে বলেন, “২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ নারী ফুটবল সাফে আমার মেয়ের একমাত্র গোলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। আমাদের থাকার জায়গা না থাকার বিষয়টি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের নজরে আসে। তখন তিনি আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।”
“কিন্তু আমাকে যে জমি দেওয়া হয় সেখানে ১৫ ফুট পানি জমে ছিল। বিভিন্ন দফতরে বহুদিন ছোটাছুটির পরও কোনো সহায়তা পাইনি। বাধ্য হয়ে মাসুরার বঙ্গমাতা গোল্ড কাপের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়া তিন লাখ টাকা দিয়ে মাটি ভরাট করি। সেই সময় মাসুরা ২৮ দিন বাড়িতে ছিল। তার ইচ্ছা ছিল দুইদিন বাড়িতে থেকে ঢাকায় যাবে। ২৬ দিনের মাথায় মেয়ের খেলার পুরস্কারের টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরি করি। এরপর মাত্র দুইদিন নতুন ঘরে থেকে ঢাকায় খেলতে চলে যায় মাসুরা।”
তিনি আরও বলেন, “এর আগে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় একটি জরাজীর্ণ দোচালা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। চাল ও দেয়াল খসে পড়ছিল। মাসুরা বাধ্য হয়ে তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে এই ঘর করে। আগে ভ্যানে করে এলাকায় ফল-মূল, শাক-সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অসুস্থতার কারণে এখন আর সেটাও করতে পারি না।”
রজব আলী বলেন, “এত টাকা খরচ করে বাড়ি বানিয়ে এখন আমরা প্রায় নিঃস্ব। এদিকে আমার শরীরটাও ভালো না, কাজ করতে পারি না। মেয়ের খেলার টাকায় সংসার চলে। কিছুদিন আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে বলে জানিয়েছে। সেই হিসেবে আমাদের বাড়িতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে গেছে। সরকারিভাবে পাওয়া আট শতক জমিতে ঘর করেছি। এটা ভেঙে দিলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় থাকবো আমরা।”
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে দুই বার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসে গিয়েও সাক্ষাৎ দেখা পাননি। পরে ইউএনওর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন মাসুরা। তখন ইউএনও বলেন, ‘সড়ক বিভাগের সীমানার মধ্যে আপনার বাড়ি পড়লে আমাদের কিছুই করার নেই।’
মাসুরার মা ফাতেমা বেগম বলেন, “মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরছে। দেশের মানুষ আনন্দ করছে। কিন্তু আমরা তো দুশ্চিন্তায় আছি। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরকারি জায়গায় থাকায় সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। আমাদের ঘরের পেছনে ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। ঘর ভেঙে দিলে থাকবো কোথায়?”
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ফাতেমা তুজ জোহরার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মাসুরাদের ঘরে ক্রস চিহ্ন দেওয়ার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি।”
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন বলেন, “সরকারিভাবে জমি পাওয়ার প্রমাণপত্র নিয়ে উচ্ছেদের দিন উপস্থিত থাকলে ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত নেবেন। ভুল করেও ক্রস দিতে পারে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস