প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বকে বেশ ভালোভাবেই আঁকড়ে ধরেছে। মহামারি ছড়িয়ে দেওয়া এ ভাইরাসে বন্ধ রয়েছে ক্রীড়া বিশ্ব। বাংলাদেশেও বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার খেলাধুলা। সারাদেশের ন্যায় সুনশান নীরবতা পালন করছে যশোরের ক্রীড়াঙ্গণ। আগের মতো আর স্টেডিয়ামে নেই কোন খেলা কিংবা পড়ন্ত বিকেলে ক্রীড়া সংগঠকদের আনাগোনা।
যশোরের শামস্-উল-হুদা স্টেডিয়াম দেশের অন্যতম একটি স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটিতে সারা বছরজুড়ে কোন না কোন ইভেন্টের খেলা চলে। হোক সেটি ক্রিকেট কিংবা ফুটবল। দু’টি ইভেন্টের বিভিন্ন টুর্নামেন্টের খেলা সময়ের ব্যবধানে মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ায় মাঠ প্রায় ব্যস্ত থাকে।
ক্রিকেট-ফুটবল ছাড়াও অন্যান্য ইভেন্টের বিভিন্ন টুর্নামেন্টের স্টেডিয়ামটিতে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে পর্যায়ক্রমে প্রিমিয়ার প্রথম বিভাগ এবং দ্বিতীয় বিভাগ ‘এ’ ও ‘বি’ ক্রিকেট লিগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এছাড়া জাতীয় ক্রিকেট লিগের যুব টাইগার জাতীয় স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতার খেলা, জাতীয় ক্রিকেটের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক খেলা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়।
এসব ক্রীড়া ইভেন্টের পাশাপাশি আন্তঃউপজেলা ও জাতীয় প্রতিযোগিতার খেলা নিয়মিত মাঠে গড়ায়। স্টেডিয়াম সংলগ্ন নাদিরা ইসলাম স্মৃতি ইনডোর ভলিবল গ্রাউন্ড ও জিমনেসিয়ামেও বছরজুড়ে ভলিবল, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া পড়ন্ত বিকেলে স্টেডিয়ামে সাবেক ফুটবলারদের মিনি ফুটবল খেলা, ভলিবল গ্রাউন্ডে সাবেক খেলোয়াড়দের ভলিবল খেলা বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়।
তবে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে থামিয়ে দিয়েছে সকল খেলাধুলা। স্টেডিয়ামের পাশাপাশি ভলিবল গ্রাউন্ড, জিমনেসিয়াম, ব্যায়ামাগার, আমেনা খাতুন ক্রিকেট গ্যালারি ও বাস্কেটবল গ্রাউন্ডও বন্ধ রয়েছে। খেলা বন্ধ থাকার পাশাপাশি বিকেলে সাবেক-বর্তমান খেলোয়াড়রা ফুটবল খেলতেন বা শারিরিক কসরত করতেন-সেটিও এখন বন্ধ রয়েছে।
অন্য সময়ে মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকতো স্টেডিয়াম। এমনকি পাশে এমএম কলেজের হোস্টেলের শিক্ষার্থীরাও স্টেডিয়ামে খেলাধুলা করতেন বা সময় কাটাতেন। তবে করোনার কারণে স্টেডিয়াম ও আশপাশের এলাকা পুরো ফাঁকা, নীরবতা।
ব্যস্ত স্টেডিয়ামের ফটকে ঝুলছে তালা। স্টেডিয়ামের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও নিয়মিত অফিস করছেন না। বাড়িতে বসে জরুরি কাজের পাশাপাশি অলস সময় কাটাচ্ছেন। ভাইরাসের কারণে যশোরের ক্রীড়াঙ্গণে বিরাজ করছে নীরবতা। ক্রিকেটের ব্যাট-বল কিংবা ফুটবলের বুটের আওয়াজ এখন শোনা যায় না।
সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে যশোরে সবধরনের খেলা বন্ধ রাখায় ক্রীড়াঙ্গণের ক্ষতির পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন খেলোয়াড়রাও। যশোর ক্রীড়াঙ্গণের কর্মকর্তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে কারো কিছু করার নেই। তারা খেলোয়াড়দের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। বলছেন, জীবন বাঁচলে খেলা পরেও করা যাবে।
যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব কবির স্পোর্টসমেইল২৪.কমকে বলেন, ‘বিকেল হলে মাঠে (স্টেডিয়ামে) না গেলে ভালো লাগতো না। এখন তিন মাস হলো স্টেডিয়ামে যাই না। বাসায় বসে সময় পার করছি। এমন পরিস্থিতিতে কারো কিছু করার নেই। সকলকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক এ দুর্যোগ কেটে গেলে আবারও সরগরম হবে যশোরের ক্রীড়াঙ্গণ। করোনার প্রভাবে সরকারি সিদ্ধান্তে যশোরে সবধরনের খেলা বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় খেলা মাঠে ফিরবে বলে আশা করি। পাশাপাশি স্টেডিয়ামেও ফিরে আসবে মুখরতা।’
যশোর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজামান মিঠু স্পোর্টসমেইল২৪.কমকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সকল খেলা বন্ধ রয়েছে। একের পর এক লিগ, টুর্নামেন্ট চলে যশোরের স্টেডিয়ামে। করোনাভাইরাসের কারণে এখানেও সকল খেলা বন্ধ রয়েছে। খেলা না থাকায় মাঠে আসা হয় না। যে কারণে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের পদচারনা নেই স্টেডিয়ামে। সুনসান নীরবতা স্টেডিয়াম এলাকায়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু বলার নেই। পরিস্থিতি ভালো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।’
সাবেক জাতীয় ও যশোরের নিয়মিত ক্রিকেটার তুষার ইমরান বলেন, ‘ফিটনেস খেলোয়াড়দের মূল সম্পদ। এমন পরিস্থিতিতে তা ধরে রাখা কষ্টের। ফিটনেস ধরে রাখতে নিজ উদ্যোগে বাড়িতে কসরত চালিয়ে যেতে হবে।স্টেডিয়ামে যেতে মন চাইলেও যেতে পারছি না। এটা খেলোয়াড় হিসেবে মেনে নেওয়া কষ্টের। তবে আশা করি, দ্রুত পরিস্থিতি কেটে উঠবে এবং স্টেডিয়াম অবারও মুখর হয়ে উঠবে।’
ভলিবল কর্মকর্তা শহীদ আহমেদ বলেন, ‘স্টেডিয়াম ঘেষে আলাদাভাবে ভলিবল গ্রাউন্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক ও বর্তমান ভলিবল খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা এখানে নিয়মিত আসেন। তবে তিন মাসেরও বেশি তালা ঝুলছে। করোনার কারণে কেউ মাঠে আসছেন না। এমন পরিস্থিতিতে অপেক্ষা করা ছাড়া কেনো পথ দেখছি না।’
যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামের অফিস সচিব মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, ‘বাসায় শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছি। তিন মাস স্টেডিয়ামে যাই না। স্টেডিয়ামের প্রতিটি গেটে তালা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কী আর করা। স্টেডিয়ামের ১০ জন কর্মচারী বেতন পেয়েছেন। তারপরও মাঠে (স্টেডিয়ামে) না যেতে পারাটা কষ্টদায়ক।’
জামাল হোসেন, যশোর
[sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]