বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) মাঠে নামছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। গ্রুপ 'ই' তে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানী থাকা বাংলাদেশের জন্য বাকি ৩ ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। ওমান, আফগানিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে কাতারের মাঠে পয়েন্টের জন্য খেলবে বাংলাদেশ তা বলাই যায়। কঠিন তিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দলের গোলকিপারকে যে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
করোনাভাইরাসের কারণে হোম ম্যাচের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলো বাংলাদেশ। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় ওমান, আফগানিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচগুলো বাংলাদেশে হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন খেলতে হচ্ছে কাতারে। কাতারের আবহাওয়া এবং পিচ- উভয়ই বাংলাদেশের আরেক 'প্রতিপক্ষ' হিসেবেই কাজ করবে।
কাতারের মাঠের সুবিধাকে বাংলাদেশ সেভাবে কাজে না লাগাতে পারলেও বাকি তিনদল এর সর্বাধিক সুবিধাটাই নিবে। সাধারণত, বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা ধীরগতির মাঠে খেলেই অভ্যস্ত। সেখানে কাতারের এমন দ্রুতগতির মাঠে বাংলাদেশের ফুটবলারদের চেয়ে বাকি তিন দেশের ফুটবলাররা যে বাড়তি সুবিধা পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বড় তিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দিতে হবে গোলকিপারদেরই। সর্বশেষ কাতার, ভারতের বিপক্ষের ম্যাচেও তা পরীলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা অতিরিক্ত ভালো খেললেই কেবল প্রতিপক্ষকে গোল থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে। একই সাথে 'দানবীয়' পারফরম্যান্স করতে হবে গোলকিপারকেও।
বাকি ৩ ম্যাচের জন্য ঘোষিত দলে প্রথমে আশরাফুল রানা থাকলেও ইনজুরির জন্য ছিটকে যান তিনি। তার পরিবর্তে দলে সুযোগ মেলে রহমতগঞ্জের গোলকিপার রাসেল মাহমুদ লিটনের। লিটন সহ দলের বাকি দুই গোলকিপার হলো বসুন্ধরা কিংসের আনিসুর রহমান জিকো ও ঢাকা আবাহনীর শহিদুল আলম সোহেল।
ইতিমধ্যেই দেশের ফুটবলভক্তরা নিজেদের পছন্দের একাদশ সাজাচ্ছে। পারফরম্যান্স কিংবা ভক্তদের পছন্দ দুই দিক থেকেই প্রথম ম্যাচে একাদশে থাকার দৌড়ে এগিয়ে বসুন্ধরা কিংসের আনিসুর রহমান জিকো।
পেনাল্টি ফেরাতে দারুণ পটু এই গোলকিপার ইতিমধ্যেই নিজের জাত চিনিয়েছেন। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে আগের ম্যাচগুলোতে আশরাফুল রানা গোলকিপারের দায়িত্ব পালন করলেও সর্বশেষ কাতার ম্যাচে গোলপোস্টের নিচে ছিলেন কক্সবাজারের জিকো। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে হারলেও সকল ফুটবল ভক্তদের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি।
দুর্দান্ত সেইভ, বল বুঝতে পারার দারুণ ক্ষমতার পাশাপাশি পেনাল্টি সেইভের বিশেষ ক্ষমতা জিকোকে করেছে অন্যদের চেয়ে আলাদা। নভেম্বরে নেপালের বিপক্ষে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হওয়া জিকো আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের একাদশেও থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
কোন কারণে যদি, জিকোকে একাদশে না দেখা যায় তবে কোচের দ্বিতীয় পছন্দ হতে পারেন ঢাকা আবাহনীর শহিদুল আলম সোহেল। কিছু ক্ষেত্রে তার দুর্বলতা বারবারই চোখে পড়ে, তবে অভিজ্ঞ এই গোলকিপার যে সেগুলো নিয়ে কোচের সাথে আলাদা কাজ করেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
লিগের পারফরম্যান্স আহামরী না হলেও খুব খারাপ নয় সোহেলের। লিগে এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচে খেলে ৫টি ম্যাচে ক্লিনশিট রেখেছেন তিনি। দলে আরও ভালো ডিফেন্ডার থাকলে হয়তো আরও ক্লিনশিট থাকতো সোহেলের। তবে, জিকোর বিকল্প হিসেবে কোচের চিন্তায় তিনিই এগিয়ে থাকবেন তা প্রায় নিশ্চিতই।
আশরাফুল রানার পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া লিটনের জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর ব্যাপারই বটে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে দলের সঙ্গে থাকছেন তিনি। তাছাড়া মাঝারি দলের এই বড় তারকা যে এখনও নির্বাচকদের নজরে আছেন তা বুঝা যায় রানার পরিবর্তে সুযোগ পাওয়ার মধ্য দিয়েই।
রহমতগঞ্জের হয়ে মাত্র দুইটি ক্লিনশিট রাখা লিটন দলে সুযোগ পাওয়া থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে আরও দুর্দান্ত খেলে একাদশে সুযোগ করে নেয়ার চেষ্টা করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) রাত ৮টায় শক্তিশালী আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল।