ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের মূল একাদশে ছিলেন স্নেহা রানা। ছিলেন বললে ভুল হবে, আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৮০ রানের পাশাপাশি ৪ উইকেট নিয়ে টেস্ট ম্যাচে ভারতের মান বাঁচিয়েছেন তিনি। ব্যাট-বলের পারফরম্যান্স যেমন তাকে আলাদা করেছে, তেমনি তিনি ভিন্নই অন্যদের চেয়ে। জীবনের প্রতিটি ধাপে সংগ্রাম করে আজকের অবস্থানে আসা। কোন ধনী পরিবার থেকে নয়, কৃষক পরিবারে বেড়ে উঠা স্নেহা দেখেছেন জীবনের নানা রঙ।
জন্মটা ভালোবাসার মাস ফেব্রুয়ারিতেই। ১৯৯৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উত্তর প্রদেশে জন্ম নেয়া এই নারী ক্রিকেটারের জীবনের উত্থান পতন ছিল চোখে পড়ার মতো। এইতো, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হলো স্নেহার। সিরিজের আগে যেখানে হাসি-খুশি থাকার কথা ছিল স্নেহার, সেখানেও একরাশ হতাশা, দুঃখকে সঙ্গী করেই অভিষেক ম্যাচে মাঠে নামেন তিনি।
ইংল্যান্ডের সিরিজ শুরুর মাসখানেক আগে প্রিয় বাবা বাগওয়ান রানাকে হারিয়েছিলেন স্নেহা। স্নেহ দিয়ে যে বাবা আগলে রেখেছিল সে বাবাকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেও হাল ছাড়েননি স্নেহা।
প্রায় পাঁচ বছর বিরতির পর ক্রিকেটে ফেরেন স্নেহা। তবে, স্নেহার জন্য ফেরাটা যে সহজ ছিল না সেটি জানান তার বোন রুচি। সেই সময়কার স্নেহার অবস্থা তুলে ধরে রুচি বলেন, 'বাবার মৃত্যুর পর সে একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে। তবে অনুশীলন বন্ধ রাখেনি স্নেহা।
ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি স্নেহার। মাত্র ৯ বছর বয়সে ট্যালেন্ট হাট প্রতিযোগিতা দিয়ে নজরে আসেন তিনি। এরপর লিটল মাস্টার্স ক্রিকেট আ্যকাডেমিতে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যান তিনি।
স্নেহার বাল্যকালের কোচ কিরণ শাহ জানান, ছোটবেলা থেকেই লাজুক ছিলো স্নেহা। এমনকি সকলের সামনে ব্যাট করতেও যেত না লজ্জায়। বাবার মৃত্যুর পর বাবা দিবসে স্নেহার এমন পারফরম্যান্স বাবা দিবসের সেরা উপহার বলেও মনে করেন কিরণ।
স্নেহা রানার প্রসঙ্গে কিরণ বলেন, 'বাবা দিবসের আগে স্নেহার এমন পারফরম্যান্স যেন বাবাকেই উৎসর্গ করা। সব কিছুই সম্ভব হয়েছে ওর পরিশ্রমের কারণে। সে আমার কাছে ক্রিকেট শেখতে আসে যখন নয় বছর বয়সে।'
ক্রিকেটে স্নেহা রানার পথচলাটা মসৃণ ছিল না। হাঁটুর ইনজুরি এবং বাজে পারফরম্যান্সের কারণে দীর্ঘ সময় তিনি নির্বাচকদের ভাবনার বাইরে ছিলেন। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া স্নেহা দেশের বাইরে সর্বশেষ খেলেছিলেন ২০১৬ সালে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্সই মূলত তার জন্য আবার জাতীয় দলের দরজা খুলে দেয়। আর দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে ব্যাট এবং বল হাতেও ছিলেন তিনি দুর্দান্ত। যার ক্রিকেটীয় জীবনের পথচলা ছিল কঠিন, কৃষক পরিবার থেকে যার বেড়ে উঠা, দীর্ঘদিন পর দলে ফেরার আগে বাবা হারানোর শোককে কাটিয়ে যিনি উঠতে পারেন, তাকে দমিয়ে রাখবে কে?
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]